প্রেম করায় গাছে বেঁধে নির্যাতন, মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ১০:০০ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

যশোরের মণিরামপুরে প্রেমের সম্পর্কের জেরে পারভেজ হাসান (১৯) নামে এক তরুণকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। নির্যাতনকালে ওই তরুণের মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয় বলে স্বজনদের অভিযোগ।

উপজেলার বাগডোব গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার পারভেজ রোববার (২৯ জানুয়ারি) খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান।

জানা যায়, যশোর সদর উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে পারভেজ হাসান শৈশব থেকেই নানাবাড়ি মণিরামপুরের বাগডোব গ্রামে থেকে পড়াশোনা করে আসছিলেন। পারভেজ গেলো বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। চলতি বছর তার বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য পাসপোর্টও করা হয়।

নানা বাড়িতে থাকার সুবাদে প্রতিবেশী ডা. ইমরান হোসেনের মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে পারভেজের পরিবার দরিদ্র হওয়ায় এ সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই প্রেমিকার বাবাসহ স্বজনরা পারভেজের ওপর নির্যাতন চালিয়ে মুখে কীটনাশক ঢেলে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যাপারীর অভিযোগ, গত ২১ জানুয়ারি সকালে প্রতিবেশী ইমরানের মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ঘটনার দুইদিন পর তাকে ঝিকরগাছা উপজেলার একটি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই সময় তার নাতি পারভেজ বাড়িতেই ছিলেন।

২৩ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ি থেকে স্থানীয় রোহিতা বাজারে উদ্দেশ্যে বের হন পারভেজ। এসময় ইমরান ও তার স্বজনরা পারভেজকে টেনে-হিঁচড়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়িতে ধরে নিয়ে যান। সেখানে গাছের সঙ্গে বেঁধে মিজানুর রহমানসহ প্রেমিকার স্বজনরা পারভেজের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালান। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পারভেজকে পান স্বজনরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে মণিরামপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

jagonews24

একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর গত ২৭ জানুয়ারি ফের ডা. ইমরানসহ কয়েকজন মিলে পারভেজকে বেধড়ক মারধর করে মুখে কীটনাশক ঢেলে দেন। রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে মারধর করে পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে পারভেজ সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পারভেজকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পারভেজ মারা যান।

পারভেজের খালা জাহানারা বেগম জানান, হাসপাতালে তার কোলেই পারভেজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মারা যাওয়ার আগে হাসপাতালের বেডে শুয়ে পারভেজ হাসান জানান, তাকে মেরে জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। পারভেজের বার্তার একটি ভিডিও রেকর্ড স্বজনরা ধারণ করে রেখেছেন।

এদিকে, এ ঘটনায় পারভেজের নানা সিদ্দিকী ব্যাপারী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। পরে জড়িত থাকার অভিযোগে ডা. ইমরান হোসেন ও তার মামা সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমি এই মারধরের সঙ্গে জড়িত নই। মেয়ে পরিবারের লোকজন ছেলেটিকে ধরে আমার বাড়িতে এনেছিল। মেয়েপক্ষ ছেলেটিকে চড়-থাপ্পড় দিলে আমি ঠেকিয়েছিলাম।

মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে মামলা নেওয়া হয়েছে। এরপর জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়ের বাবাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মিলন রহমান/এমআরআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।