জমি-বেতন দাবি, ইন্সপেক্টর স্বামীর বিরুদ্ধে এসআইয়ের মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৯:৩৮ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

যশোরে অর্ধকোটি টাকা যৌতুক দাবিতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে কর্মরত স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) ভুক্তভোগী শাহাজাদীর ভাই শেখ রোকন যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ গোলাম কবির মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে আদেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান ঝিনাইদহে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে ঝিনাইদহ থেকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের মৃত সাত্তার ফকিরের ছেলে।

শাহাজাদী আক্তার বর্তমানে যশোর সদর আদালতে জিআরও পদে কর্মরত। তিনি বাগেরহাট সদর উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী শেখের মেয়ে।

বাদী শেখ রোকন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ২০০০ সালে তার বোন শাহাজাদী আক্তারের সঙ্গে পরিদর্শক কামরুজ্জামানের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। শাহাজাদীর নামে খুলনায় ১২ শতক জমি কেনা রয়েছে। ওই জমির বর্তমান বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা। সম্প্রতি ওই জমি এবং স্ত্রী শাহাজাদীর প্রতিমাসের বেতনের ৪৫ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন কামরুজ্জামান। রাজি না হওয়ায় শাহাজাদীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। যে কারণে ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর শাহাজাদী তার স্বামীর বিরুদ্ধে যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে একটি মামলা করেন।

মামলার পর থেকে শাহাজাদীর ওপর ক্ষিপ্ত হন ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামান। গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কামরুজ্জামান যশোরের স্টেডিয়ামপাড়ায় শাহাজাদীর ভাড়া বাসায় আসেন। এসময় তার বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়েছে এবং যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।

ওইদিন কামরুজ্জামান আরও বলেন, আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার, খুলনার জমি বিক্রি করার টাকা এবং বেতনের ৪৫ হাজার টাকা না দিলে শাহজাদীকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। দাবি পূরণ করতে রাজি না হওয়ায় এলোপাতাড়ি মারপিট করেন কামরুজ্জামান। একপর্যায়ে শাহাজাদীর গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টা করা হয়। হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে ডাইনিং টেবিলের ওপর থাকা ফল কাটা ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করেন কামরুজ্জামান। এসময় এসআই শাহজাদী মাথা ও হাতে আঘাত পান।

তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কামরুজ্জামান দৌড়ে পালিয়ে চলে যান। পরে শাহাজাদীকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে থানায় এজাহার দাখিল করলে কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপর স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলাটি করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

তবে যৌতুক দাবিতে স্ত্রী শাহাজাদীকে মারপিটের ঘটনা অস্বীকার করেছেন পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, মামলার প্রমাণ থাকলে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী রুহিন বালুজ বলেন, এ ঘটনায় এরআগে কোতোয়ালি থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু থানা থেকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে আদালতে মামলাটি করা হয়েছে।

মিলন রহমান/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।