বিশ্ব ইজতেমা: প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাতদফা দাবি সাদপন্থিদের

তাবলীগের সার্বিক কার্যক্রম ও বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত একটি কমিটি গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার সাদ কান্ধলভী অনুসারী সাথীরা।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে উত্তরায় একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে সাতদফা দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তাবলিগের দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ অনুসারী অ্যাডভোকেট আব্দুল কুদ্দুস বাদল লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২৪ সালে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব যেহেতু তারা করবেন, তাই বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকারও দাবি জানান তিনি।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি শেষ হলো বাংলাদেশের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা। যেখানে তাবলিগের সাধারণ সাথীদের পাশাপাশি প্রায় নয় হাজারের অধিক বিদেশি মেহমান দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে দেশ-বিদেশে চার হাজারের অধিক জামাত দাওয়াতের কাজে বের হয়েছেন, যা সত্যিকারের বিশ্ব ইজতেমার রূপ লাভ করেছিল।
সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা আরও বলেন, সেখানে সরকার বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন কিন্তু পরবর্তী সময় বিশ্ব ইজতেমার ময়দান নিয়ে তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী) সঙ্গে বরাবরের মতো বৈরী ও বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে তাবলিগের বিশ্ব মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনের অনুসারী মূলধারার তাবলিগের সাথীদের দ্বারা টঙ্গী মাঠকে সরল বিশ্বাসে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু হেফাজত সমর্থিত মাওলানা জুবায়ের সাহেবের গ্রুপকে রহস্যজনকভাবে একতরফা ২০২৩ সাল পর্যন্ত টঙ্গী ময়দান মাদরাসা এলাকা, টিনশেড মসজিদ এবং গোডাউন এলাকা ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেখানে মূলধারার তাবলিগ সাথীদের কেবল প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমার জন্য ব্যবহার করতে পাঁচদিনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব ইজতেমার মাঠে বিদ্যমান টিনশেডের পাশে আরেকটি শেড নির্মাণকাজ শুরু করেছেন কে বা কারা।
তারা প্রশ্ন তোলেন এসব কার অনুমতিক্রমে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তাবলিগের মূল ধারার সাথীদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি।
টঙ্গী ময়দানে তাদের একচ্ছত্র অধিকার কে দিয়েছেন? এই বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দিল্লির নিজামুদ্দিন বিশ্ব মারকাজ থেকে পরিচালিত তাবলিগ জামাতকেই দেওয়া হয়েছিল।
তারা উল্লেখ করেন, চার বছর ধরে মাওলানা জুবায়ের গ্রুপকে চার সপ্তাহের জন্য কাকরাইল ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর মূলধারার তাবলিগের সাথীরা মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করছেন। অথচ এই বিভাজনের কোনো আইনগত এমনকি নৈতিক ভিত্তিও নেই। আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে এবং হেফাজত সমর্থক এই বিচ্ছিন্ন তাবলিগের গ্রুপের মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসন এই একতরফা বিভাজন করে আসছে।
এ সময় প্রশাসনের কাছে তাদের সাতদফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে-
আমাদের অনুরোধ বিশ্ব ইজতেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই মাঠের প্যান্ডেল নির্মাণ ও খোলার কাজ করবেন। প্রয়োজনে প্রশাসনের তদারকিতে উভয় পক্ষ বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ব্যবহার করবেন।
কাকরাইল ও বিশ্ব ইজতেমার মাঠ থেকে দুই মাদরাসাকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা, কারণ শুধু তাবলিগের কাজের জন্যই এই মাঠ ও কাকরাইল মসজিদ।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ তাবলিগের সার্বিক কার্যক্রম ও বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত একটি কমিটি গঠন করা।
কাকরাইল মসজিদ আগের মতো দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের অধীনে পরিচালনার যাবতীয় ব্যবস্থা করা।
দেশের সব মসজিদে তাবলিগের সব কার্যক্রমের জন্য অনুমতি দেওয়া। ধর্মীয় কাজে বাধা দিলে ও অপপ্রচার চালালে সংবিধান মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া। দেশে স্বাধীনভাবে ধর্মীয় দাওয়াতি কাজ করার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া।
টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় সব মুরব্বিকে আসার বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান এবং বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাবলিগের যাবতীয় কাজ পরিচালনায় হেফাজতসহ তৃতীয় পক্ষের রাজনীতিক অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। যাতে করে ইসলামের নামে কোনো পক্ষ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে তাবলিগের নামে কেউ ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।
সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়ার সমন্বয়কারী মো. সায়েমসহ বেশ কয়েকজন মুরব্বি উপস্থিত ছিলেন।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/জিকেএস