ওএমএস
চাল-আটার অপেক্ষায় শিশু জান্নাত, ঘুমিয়ে পড়েছেন জরিনা
অডিও শুনুন
কুয়াশার চাদরে ঢাকা দিনাজপুর। ভোরের কুয়াশা তখনো কাটেনি। দেখা গেল স্যান্ডেল খুলে রেখে ওএমএসের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে চাল-আটা নেওয়ার জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ বিছিয়ে বসে আছে ছয় বছর বয়সী জান্নাত। তার সামনেও দীর্ঘ ব্যাগের সারি। অন্যান্যরা আছেন দাঁড়িয়ে।
কথা বলে জানা যায়, বুধ ও বৃহস্পতিবার চাল-আটা না পেয়ে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ভোর পৌনে ৬টায় মা আইরিন (৩৫) মেয়ে জান্নাতকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সংসারের কাজে যান। এদিনও যাতে চাল-আটা না পান সে ভয়ে। শিশু জান্নাত পণ্য নিতে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছে ওএমএসের ডিলারের দোকানের সামনে।
আরও দেখা গেল, ভোরে চাল-আটার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে মধ্যবয়সী এক নারী ওএমএসের ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে একটি রড-সিমেন্টের তৈরি খুঁটিতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
রোববার সকাল সোয়া ৭টার দিকে দিনাজপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
দিনাজপুর পৌরসভায় সরকারি ছুটির দিন বাদ বাকি পাঁচদিন ১২টি ওয়ার্ডে ১৩ জন ডিলার ১৭ বস্তা করে ওএমএসের (খোলা বাজার) আটা এবং ১৪ বস্তা করে চাল বিক্রি করেন।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার মহসীন হোসেন। নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে তার বিক্রয় কেন্দ্র। এলাকাটি ঘন জনবসতি এলাকা। এখানে পরিবহন শ্রমিকসহ অসংখ্য শ্রমিক রয়েছেন। তাই চাহিদাও বরাদ্দের চেয়ে বেশি।
শিশু জান্নাতের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে একটি মাদরাসায় প্লেতে পড়ে। বাড়ি পাশের সিপাহী পাড়ায়। বাবা আলাউদ্দিন ফেরি করে বাদাম বিক্রি করেন। মা আইরিন গৃহিণী। কয়েকদিন তারা দেরিতে আসায় চাল-আটা পাননি। তাই ভোরে মা তাকে লাইনে দাঁড় করে দিয়ে যান। সে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়েছে। সে সময় তার মা আইনির উপস্থিত হলেও কথা বলতে রাজি হননি।
আরেক পাশে দেখা যায় মধ্যবয়সী জরিনা খাতুন একটি খুঁটিতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। অন্যান্য নারীরা জানান, জরিনা খাতুন অনেক ভোরে এসেছেন। তাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তারা বলেন, সকাল ৯টায় চাল-আটা দেওয়া শুরু হয়। আগেভাগে না এলে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। এখানে বরাদ্দের চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি।
ডিলার মহসীন হোসেনের সহযোগী আবু জানান, এলাকাটিতে শ্রমিক, দিনমজুরের বসবাস বেশি। পাশেই রয়েছে বিশাল এক বস্তি। তাই বরাদ্দের চেয়ে চাহিদা অনেক। তাই অনেককে ঘুরে যেতে হয়।
এমদাদুল হক মিলন/এসআর/জিকেএস