পোনা নদী এখন মরা খাল


প্রকাশিত: ০৪:২৬ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঝালকাঠির রাজাপুরের ঐতিহ্যবাহী পোনা নদী ধীরে ধীরে যৌবন হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। খননের অভাব ও একাধিক স্লুইচ গেটের কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, এ নদী রাজাপুর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুরের আঙ্গারিয়া গ্রামের সত্যনগর এলাকার জাঙ্গালিয়া নদী থেকে শুরু করে আংগারিয়া, আলগী, জীবনদাসকাঠি, কৈবর্তখালী, গালুয়া, চাড়াখালি গ্রাম হয়ে ভান্ডারিয়ার কচানদী পর্যন্ত বাঁকে বাঁকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ নদীর খরস্রোতায় পলি মাটির কারণে দু’পাশের কৃষকরা অধিক ফসল ফলাতো। বেশি বেশি প্রাকৃতিক মাছ জন্মাতো। কিন্তু বর্তমানে এ নদীটি মরা খালে পরিণত হওয়ায় তীরবর্তী অনেক গ্রামে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই পোনা নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার চলতো। কিন্তু এখন নৌকাও চলছে না। বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি প্রবাহই হচ্ছে না।

এ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি নদী নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতা লেখায় বিশ্বের মানুষের কাছে অনেক পরিচিতি লাভ করলেও ওই নদীর চেয়ে পোনা নদীর গুরুত্বও কোন অংশেই কম ছিল না। এছাড়া এ নদীটিও যদি সময়মত খনন হতো তাহলে ধানসিঁড়ি নদীও তার যৌবন হারাতো না। কারণ ধানসিঁড়ি নদী দিয়ে জাহাজ, স্টিমার ও লঞ্চ এসে এ নদী দিয়ে খুলনা মংলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো।

নদী তীরের জীবনদাশকাঠি গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৯০), আলহাজ মোকছেদ আলী (৯২) ও আবদুল মজিদসহ (৮৫) একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, প্রায় দেড়’শ বছর আগে এ নদীতে বড় বড় শিপ, জাহাজ, স্টিমার ও লঞ্চ এবং পাল তুলে সারি সারি নৌকা চলতো। এমনকি শিশুদের নদীতে পড়ে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ভয়ে বা কুমিরে নিয়ে যাওয়ার ভয়ে ওই নদীর পাড়ে যেতে দিতো না মা-বাবা । ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বড় বড় মালবাহী জাহাজ স্টিমারসহ বিভিন্ন প্রকারের জলযান বরিশাল হয়ে প্রথমে ধানসিঁড়ি হয়ে পোনা নদী দিয়ে কচা নদী হয়ে খুলনা বন্দরে যেত। এই পোনা নদী তখন চ্যানেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এ নদীতে খরস্রোত থাকায় নদীর দু’পাশের ফসলি জমিতে পানি আটকে না থাকায় এবং পলি মাটি আসায় ধানসহ সব ধরনের ফসল প্রচুর পরিমাণে ফলতো।

তারা আরও জানান, এ নদীতে স্রোত থাকায় এর সঙ্গের খালগুলোতেও স্রোত ছিল ফলে এলাকার পুকুর ও ডোবায় প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পড়তো। বর্তমানে নদীটি মরে যাওয়ায় এসব এলাকা থেকে দেশীয় মাছও হারিয়ে গেছে।

ওইসব গ্রামের কৃষক খালেক শিকদার, কাছেম মল্লিক, নান্নু শিকদার, ইউসুব আলী হাওলাদার ও হারুন অর রশিদ জানান, নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখন পানির মৌসুমে হাঁটু পর্যন্ত পানি থাকে এবং শুকনা মৌসুমে আদৌ কোন পানি থাকে না। এ নদীর দুই পাশে হাজার হাজার হেক্টর ধান ফসলি জমি রয়েছে। এ নদীতে বিভিন্ন স্থানে একাধিক স্লুইচ গেট থাকার কারণে এবং খননের অভাবে বোরো ও আমন ধান চাষের সময় পানি আটকে থাকায় আগের তুলনায় ধানের ফলন অনেক কম হয়। পলি মাটির অভাবে নদীর দুই পাশের জমির উর্বরতা কমে যাওয়ায় মরিচ, আলু, ডাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন রবি শস্য আবাদ না করে ওই জমিতে বৃক্ষের বাগান এবং বসতবাড়ি নির্মাণ শুরু করেছে।

জীবনদাশকাঠির গ্রামের প্রবীণ কৃষক আবদুল মজিদ জানান, ইংরেজি ১৯৫০ সালে পুরাতন গভীরতা বাদে নতুন ১০ ফুট গভীরতায় এ নদীটি খনন করা হয়েছিল। এ দেশ স্বাধীনের পরে নামমাত্র কয়েকবার খনন করা হলেও আগের যৌবন ফিরিয়ে আনতে না পারায় নদীটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। তাই নদীটি দ্রুত খননের ব্যবস্থা করে কৃষি উন্নয়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এ নদী সংশ্লিষ্ট হাজারও কৃষক।

এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।