সুপারি চুরির অভিযোগে বাবা-ছেলেকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ঝালকাঠির নলছিটিতে সুপারি চুরির অভিযোগে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ১১ বছরের এক শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে প্রভাবশালী একটি মহল। এ ঘটনায় ওই শিশুর বাবাকেও একইভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ১১ ঘণ্টা শিকলে বেঁধে বাবা-ছেলেকে মারধরের পর সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত ১১দিকে ওই গ্রামের লতিফ খানের বাড়ির আঙিনায় শুকিয়ে মজুত করে রাখা দুই কুড়ি (৪২০টি) সুপারি চুরির ঘটনা ঘটে। ওই শিশুর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে তাকে ও তার বাবা মো. বাবুল হাওলাদারকে বাড়ি থেকে লতিফ খানের বাড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর লতিফ ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে বাড়ির উঠানে আমড়া গাছের সঙ্গে তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালান।

রাত ১২টার দিকে আব্বাস হাওলাদার নামে স্থানীয় এক মাংস বিক্রেতা কাঁচি দিয়ে ওই শিশুর মাথার চুল কেটে দেন। এরপর সারারাত গাছের সঙ্গে তাদের বেঁধে রাখা হয়। সোমবার সকালে এলাকা এ ঘটনা জানাজানি হয়। তখন অবস্থা বেগতিক দেখে মুচলেকা নিয়ে বাবুল হাওলাদার ও তার ছেলেকে ছেড়ে দেন লতিফ খান।

ভুক্তভোগী বাবুল হাওলাদার বলেন, ছেলের বিরুদ্ধে সুপারি চুরির অভিযোগ তুলে সারারাত আমাদের খোলা আকাশের নিচে গাছে সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। রাতে শীতে অনেক কষ্ট পেয়েছি। সকালে একটি সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।

নির্যাতনের শিকার শিশুর মা বলেন, আমার ছেলে ও স্বামীকে রাতে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমিও ঘটনাস্থলে যাই। তখন লতিফ খান আমাকে একটি চড় মারেন। আমার স্বামী ও ছেলেকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে মারধরের কারণে তাদের সারাশরীর কালো হয়ে ফুলে উঠেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, আমি অসহায়। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি কাওকে না জানানোর জন্য আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, হাতেনাতে না ধরে এবং কোনোপ্রকার সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই এভাবে চুরির অভিযোগে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।

তবে লতিফ খান নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই ছেলে সুপারি চুরি করায় তাকে বেঁধে রাখা হয়। তাকে মারধর করা হয়নি। চুরি করার পরেও বাবা ছেলেকে শাসন না করায় তাকেও আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি এখনো জানি না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আতিকুর রহমান/এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।