নড়াইলে চাষের আওতায় ২২৫ হেক্টর পতিত জমি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ১০:০১ পিএম, ১৫ মার্চ ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে নড়াইলের বিভিন্ন স্থানে পতিত জমিতে সবজিসহ নানা ফসলের চাষ শুরু হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এ উদ্যোগে সাড়া দিয়েছেন।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে জেলার ২২৫ দশমিক ৬৩ হেক্টর পতিত জমিতে সরিষা, সূর্যমুখী, শাকসবজি, চিনাবাদাম, চুঁইঝাল, মরিচ,পুঁইশাক, কলমি শাক, পেঁয়াজ-রসুন, কুমড়া, লাউ, তিল, তরমুজ, বাঙ্গি, বেগুন, করলাসহ নানা ফসল চাষ করা হচ্ছে। এতে অনেকে সাফল্যও পেয়েছেন।

লোহাগড়া উপজেলার কালনা এলাকার নজরুল মোল্যা বলেন, যশোর-কালনা সড়কের রাস্তার পাশে আমার বাড়ির সামনে সরকারি ৪০ শতক জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এবছর কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ায় সূর্যমুখীর চাষ করেছি।

jagonews24

তার মতো লোহাগড়ার কামঠানা গ্রামের লায়েক শেখ রাস্তার পাশের সরকারি জমিতে বোরো ধান, আলিম শেখ উন্নত মানের ঘাস এবং রাজ্জাক শেখ বেগুন লাগিয়েছেন।

কালিয়া উপজেলার পাটনা গ্রামের কৃষক রাজীব মোল্যা বলেন, পাটনা খালপাড়ে দুই বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই একর জমি পতিত অবস্থায় ছিল। কৃষি বিভাগের সহায়তায় এবছর ওই জমিতে সরিষার চাষ করে ২৫ মণ সরিষা উৎপাদন করেছি।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইটভাটা মালিক মো. হাসানুজ্জামান বলেন, এবছর ইট পোড়ানো হয়নি। তাছাড়া ভাটা সংলগ্ন অনেক জমি পতিত অবস্থায় পড়ে ছিল। কৃষি বিভাগের উৎসাহে প্রায় সাত একর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। এখন সূর্যমুখী, মরিচ, পেঁয়াজ-রসুন, কুমড়া ও তিলের চাষ চলছে। এর আগে চার একর জমিতে সরিষার চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি।

jagonews24

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রত্যেক বাড়ির আঙিনায় কিছু পরিত্যক্ত জমি থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন গাছপালা দিয়ে এসব জায়গা ঢাকা থাকে। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বাড়ির মালিকদের চাষে উৎসাহিত করে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় নড়াইল সদরে চলতি অর্থবছরে চারশ বাগান করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।

কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে পতিত জমি ফেলে না রেখে চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও আমার অফিসের সামনে যতটুকু জায়গা ফাঁকা রয়েছে সেখানে লালশাক ও কুমড়া চাষ করা হয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, বর্তমানে নড়াইল-কালনা সড়কের পাশের অসংখ্য পরিত্যক্ত জমিতে সূর্যমুখী, ধান, বেগুনসহ অন্য সবজির চাষ শুরু হয়েছে। আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে চাষ আরও বাড়বে।

jagonews24

এ বিষয়ে নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় মোট ৭২২ হেক্টর পতিত জমি ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ২২৫ দশমিক ৬৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ শুরু হয়েছে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিভিন্ন ব্যক্তি এ কাজের সহায়তা করছেন। এসব চাষে এরইমধ্যে সফলতাও এসেছে। আগামী বছর আরও ৩০০ হেক্টর পতিত জমি এসব চাষের আওতায় আসবে। এছাড়া বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে জেলার তিন উপজেলায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাড়ির চারপাশের প্রায় এক বিঘা জমিতে লাউ, বেগুন, লালশাক, কলমি শাক, ধনিয়াপাতা, টমেটো, ঢেঁড়স, পেঁপে ও কলার চাষ করা হয়েছে। এছাড়া তিন উপজেলা প্রশাসন মিলে প্রায় ছয় একর পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়েছে। আমরা চাই কোনো জায়গা যেন ফাঁকা না থাকে, সে লক্ষ্য পূরণে কৃষি বিভাগের সঙ্গে সবাই মিলেমিশে কাজ করছি।

হাফিজুল নিলু/ এমআআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।