ঈদযাত্রা

উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে শঙ্কা ফিটনেসবিহীন গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
রঙ আর মেরামতের মাধ্যমে ভাঙাচুরা গাড়িকে নতুন করা হচ্ছে

ঈদে উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে অসম্পন্ন সড়কের পাশাপাশি নতুন যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। শুধু রঙ পরিবর্তন করেই চলাচল অযোগ্য গাড়িগুলো নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে দূর পাল্লার যাত্রীবহনে। এ মুহূর্তে সড়ক নির্মাণ সমস্যার চাইতে ঝুঁকিপূর্ণ এ যানবাহনকেই গলার কাঁটা বলছে সড়ক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশ।

তারা মনে করছেন, শুরু থেকেই অবৈধ এসব গাড়ি চলাচল বন্ধ করা না গেলে যানজট ব্যবস্থায় বিপর্যয় হতে পারে। কারণ পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি পাওয়ায় এখন অনেকেই নিজ বাড়িতে ঈদের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

বগুড়া শহরতলীর চারমাথার ভবেরবাজার ভাই ভাই গ্যারেজ। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে গিয়ে দেখা গেলো সেখানে পুরাতন বেশ কয়েকটি গাড়ির রঙ করা হচ্ছে। ঠিকঠাক করা হচ্ছে বডির ভেঙে যাওয়া অংশগুলো।

গ্যারেজ মালিক সোলায়মান আলী বলেন, ‘এগুলো ঈদে যাত্রী পরিবহন করবে। এ কারণে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০টির বেশি গাড়ি রং করে ডেলিভারি করেছি। আমার মতো একাধিক গ্যারেজে এভাবে পুরাতন গাড়িতে নতুন রূপ দেওয়া হচ্ছে।

ফিটনেসবিহীন গাড়ির প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গাড়ি চিহ্নিত করার কেউ নই। এ কাজ পুলিশের ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের। তারা নিজেদের কাজ ঠিকমতো করুক। তাহলে মহাসড়কে এ যন্ত্রণা আর থাকবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোগান্তি কমাতে ২০১৯ সালে দুলেনের এ মহাসড়কে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের এপ্রিলে। দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা এ প্রকল্পের কাজ। তবে এখনো বেশ কয়েকটি স্থানে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় কাজ শেষ হয়নি।

এখনো দুলেনের যানবাহন চলছে এক লাইনে। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় গোবিন্দগঞ্জে এখনো নতুন সড়কের কাজ শুরু সম্ভব হয়নি। সেখানে সরু সড়কে একলেনে চলাচল করতে হচ্ছে প্রতিটি গাড়িকে। একইভাবে পলাশবাড়ি অংশে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজেও কোনো অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত সেখানে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। ফলে রংপুর বিভাগে যাতায়াতকারী প্রতিটি যানবাহনকে এই অংশের যানজটের কবলে পড়তে হতে পারে এমনটিই আশঙ্কা করছেন চালক ও মালিকরা।

সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হামিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, এখন কাজ দ্রুত চলছে। ঈদে আমরা বগুড়া অংশে চারমাথা এবং বারপুর অংশের আন্ডারপাসটি খুলে দেবো। এর কারণে যানজট অনেক কমে যাবে বলে আমরা মনে করছি। তবে মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন অবৈধ গাড়িগুলো কমানো না গেলে যানজট রোধ সম্ভব নয়। কারণ গাড়িগুলোই সড়কের মধ্যে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে এবং যানজট সৃষ্টি করে।

উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে শঙ্কা ফিটনেসবিহীন গাড়ি

গত ঈদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তখন সড়কে ৫৬টি এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ১৮টি গাড়ি নষ্ট হওয়ার রেকর্ড ছিল। গাড়িগুলো বেশিরভাগই মহাসড়কে চলার মতো উপযুক্ত নয়। একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলে তার সামনে পেছনে বিশাল আকারে যানজট দেখা দেয়।

এদিকে ঈদে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৪টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি। হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় করে কাজ করা হবে। আশা করছি কোনো ঝুঁকি থাকবে না। এছাড়া অবৈধ যানবাহন চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। একইভাবে উত্তরবঙ্গ অভিমুখী, রাজশাহী অভিমুখী এবং পাবনা অভিমুখী যে পয়েন্টগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে সেগুলোতে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

সড়কের বর্তমান অবস্থা

এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্পের অংশ হলো ১৯০ কিলোমিটারে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক। প্রকল্পটি টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এখন দ্বিতীয় মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ অনেক স্থানেই কাজ চলছে ঢিমেতালে।

সড়ক বিভাগ সূত্র বলছে, ১৯০.৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ আবদুল মোনেম লিমিটেড, মনিকো লিমিটেড, কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড এবং চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড করছে। নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণে। সেখানে স্থানীয় প্রশাসন এখনো জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে পারেনি। এ কারণে ঠিকাদার কাজও শুরু করতে পারেনি।

বাস চালকরা বলছেন, এলেঙ্গা পর্যন্ত সড়ক চারলেন থাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো এ পথটুকু নির্বিঘ্নে অতিক্রম করতে পারে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। আবার সেতুও দুই লেনের। ফলে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেনে আসা গাড়িগুলোকে এখানে এসে বাধ্য হয়েই ধীরগতিতে চলতে হয়। এ থেকেই শুরু হয় যানজট।

বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, সারা বছর ২০-২২ হাজার যানবাহন সেতু পারাপার হয়। ঈদের আগে তা বেড়ে ৫০-৬০ হাজার পর্যন্ত পৌঁছায়। গতবার ঈদযাত্রায় একদিনে ৫৪ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছিল। স্বাভাবিকের চেয়ে যানবাহনের আধিক্য থাকায় দুই লেনের সড়কে যানজট লেগে যায়।

উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে শঙ্কা ফিটনেসবিহীন গাড়ি

হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহন মালিক শ্রমিক সূত্র জানায়, প্রতি বছরই ঈদ উপলক্ষে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামায়। এসব গাড়ির বেশিরভাগই হঠাৎ মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে দুই লেনের সড়কের উভয়পাশে যান চলাচল ব্যাহত হয়। ধীরে ধীরে এ অবস্থা রূপ নেয় তীব্র যানজটে। এছাড়া অনেক সময় চালকের অদক্ষতা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছি। সড়কে অবৈধ যান ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে না চলে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি এবারে সমস্যা হবে না।

আব্দুল মালেক নামের একজন চালক বলেন, সড়কের নির্মাণ কাজের জন্য ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে আমাদের। কবে থেকে দেখছি কাজ চলছে। কবে শেষ হবে আল্লাহ জানেন। আমরা এবারো দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করবো এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমিনুল নামের এক যাত্রী বলেন, কষ্ট করে চার ঘণ্টার রাস্তা ১০-১২ ঘণ্টা পার করে বাড়ি যাবো। আবার একইভাবে কর্মস্থলে ফিরবো। এটা একরকম গজব বলা যেতে পারে। এ দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি কোথায়?

এদিকে ১১ এপ্রিল বগুড়ার প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ঈদে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে বগুড়ার চান্দাইকোনা বাজার, শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন।

তিনি বলেন, মানুষের চলাচল নির্বিঘ্নে করতে মহাসড়কে সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ঈদের সাতদিন আগে ও সাতদিন পরে মহাসড়কে অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার চলাচল করবে না। মহাসড়কের বিভিন্ন ওভারপাস পয়েন্টের মুখ খুলে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর মেয়র, পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে সজাগ থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।