সরকারের সহায়তা চায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হাত হারানো শিশু জিহাদ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২৩

১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদ হোসেন। যে বয়সে দৌড়াদৌড়ি আর ছোটাছুটি করে সারা গ্রাম মাতিয়ে তোলার কথা হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার বাম হাত ঝলসে যায়। অবশেষে হাতটি শরীর থেকে অপসারণ করতে হয়। গত দেড় মাস ধরে বিছানাগত হয়ে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের প্রহর গুনছে শিশুটি।

জিহাদের বাবা দরিদ্র হওয়ায় সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তার কৃত্রিম হাত প্রতিস্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চায় পরিবার।

নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামের সাজেদুল ইসলাম ও জনি বেগম দম্পতির ছেলে জিহাদ হোসেন। চুনিয়াগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সে। গত ৭ মার্চ প্রতিবেশী মঞ্জুয়ারা বেগম তার মুরগির ফার্মের টিনের ছাউনিতে জমে থাকা কাঁঠালের পাতা নামাতে জিহাদকে তুলে দেন। টিনের ছাউনিতে ওঠার কিছুপরই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় জিহাদ। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার বাম হাতসহ শরীরের বেশকিছু অংশ পুড়ে যায়।

স্থানীয়রা জিহাদকে নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওইদিনই তাকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। এরপর ঝলসে যাওয়া বাম হাতটি শরীর থেকে অপসারণ করা হয়। সেখানে তাকে এক মাস তিনদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়।

গত ১০ এপ্রিল ছাড়পত্র দেওয়া হলে জিহাদকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এখন নিস্তেজ শরীরে বিছানায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে দুরন্ত শিশুটিকে। কেউ কাছে গেলেই অঝোরে কাঁদছে আর বলছে, ‘আমি আবার ভালো হয়ে বাঁচতে চাই। খেলাধুলা করতে চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজা আক্তার বলেন, জিহাদ খেলাধুলা করছিল। এসময় প্রতিবেশী মঞ্জুয়ারা বেগম তার মুরগির ফার্মের টিনের ছাউনিতে জমে থাকা কাঁঠালের পাতা নামানোর জন্য তাকে তুলে দেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই বিকট শব্দ আসে ফার্ম থেকে। শব্দ শুনে ফার্মে গিয়ে দেখি টিনের ওপর দগ্ধ অবস্থায় জিহাদের শরীর থেকে ধোঁয়া উঠছিল। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রতিবেশী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ছাউনির ওপর উঠে কাঁঠালের পাতা পরিষ্কার করার জন্য জিহাদকে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওপরে ওঠার কিছু পরই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে জিহাদের শরীর পুড়ে যায়। কিন্তু এমন দুর্ঘটনা হবে বুঝতে পারিনি।

জিহাদের মা জনি বেগম বলেন, আমরা দরিদ্র পরিবার। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা করানো হয়। এখন ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সচ্ছলতা আমাদের নেই। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। জিহাদের কৃত্রিম হাত প্রতিস্থাপনে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, হাত হারানো শিশুটিকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কৃত্রিম হাত পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শাখায় উত্থাপন করা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আব্বাস আলী/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।