‘স্ত্রী-সন্তানদের দুবেলা ভাতের জন্য হাড়ভাঙা খাটুনি করি’
পাবনার ঈশ্বরদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চল লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের ফরিদ হোসেনের ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ করেন মাহাবুল আলম পাপ্পু (৪৫) ও তার সঙ্গীরা। ভাটার সব কাজই তারা করেন। এদের মধ্যে পাপ্পু প্রায় ছয়মাস ধরে একটানা ইটভাটায় করছেন। শুধু ঈদের দিন তার ছুটি ছিল।
১ মে (সোমবার) সকাল ৯টায় নুরুল্লাপুরে ফরিদের ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ভাটাজুড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। মাটি দিয়ে নতুন ইট তৈরি, ইট পোড়ানো, ইট সাজানো, ইট ট্রাক ও পাওয়ার ট্রলিতে তোলাসহ শতাধিক শ্রমিক নানান কাজে ব্যস্ত।
ভাটার দক্ষিণ পাশে ট্রাক ও পাওয়ার ট্রলিতে ইটবোঝাই করছিলেন পাপ্পু। এসময় মে দিবসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মে দিবস সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আর জেনেই কী করবো? আমাদের তো ভাটার মালিক ছুটি দিবে না। ছুটি কাটালে হাজিরা দিবে না। কাজ না করলে আমাদের পেট চলে না। পেটের চিন্তা করতেই দিন চলে যায়।’
ভাটাশ্রমিক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর ইটভাটায় কাজ করি। এ ইউনিয়নে ৫০টির বেশি ভাটা আছে। এসব ভাটায় প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। আমাদের কোনো শ্রমিক সংগঠন নেই। মে দিবস বিষয়ে আমাদের মতো শ্রমিকের কোনো ধারণাও নেই। কাজ করলে মজুরি আছে, না করলে নেই। তাই মে দিবস কী তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথাও নেই।’

ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ করেন রাসেল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইট পোড়ানো খুই কঠিন কাজ। ভাটার আগুনের তাপে শরীরের রং বিবর্ণ হয়ে গেছে। আগুনের পাশাপাশি রোদেও পুড়তে হয়। পরিশ্রম অনুযায়ী আমাদের মজুরি আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল।’
মে দিবস প্রসঙ্গে রাসেল হোসেন বলেন, ‘আজ (সোমবার) মে দিবস। সেটি শুনেছি। কিন্তু আমাদের কাজ না করলে তো মজুরি নাই। চারজনের সংসারে আমি একা আয় করি। কাজে না আসলে তো পেটে ভাত জুটবে না। তাই বাধ্য হয়েই কাজে আসছি। ইট পোড়ানো শ্রমিকদের ঈদের দিনেও কাজ করতে হয়। মে দিবসে তো ছুটির প্রশ্নই আসে না।’
ইট বহনকারী পাওয়ার ট্রলির সহকারী সুইট বলেন, ‘আমাদের তো ছুটি কাটালে মজুরি হবে না। তাই বাধ্য হয়ে কাজে এসেছি। মে দিবস বা শ্রমিক দিবস সবার জন্য না। আমাদের মতো দিন মজুরদের কাজ করতেই হবে। তাছাড়া কোনো উপায় নেই।’

ভাটার শ্রমিক লিটন হোসেন বলেন, ‘ভাটার কাজে খুবই পরিশ্রম হয়। ইট টানা, গাড়িতে তোলা আবার গাড়ি থেকে নামানো—সারাদিন এ কাজের মধ্যেই আছি। চেহারা অবস্থা দেখলেই তো বুঝতে পারছেন হাড়ভাঙা খাটুনি করি। শুধু স্ত্রী, সন্তানদের দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য। কাজ না করলে পরিবারে খাবার সংকট দেখা দেয়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচে টান পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন কাজে আসি।’
ঈশ্বরদী ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয় জাগো নিউজকে বলেন, ভাটার শ্রমিকরা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করেন। কাজে হাজির না হলে তাদের মজুরি দেওয়ার সুযোগ নেই। ভাটা চালু থাকলে শ্রমিকদের কাজ করতেই হয়। শ্রমিকরা একদিন ভাটায় না এলে ভাটা চালানো যাবে না। তাই মে দিবসেও তাদের ছুটি দেওয়ার সুযোগ নেই।
এসআর/জিকেএস