প্রচণ্ড রোদে বোরোচাষির ‘পোয়াবারো’
দিনাজপুরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গরমে অতিষ্ঠ হলেও রোদে বোরো ধান শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভালো দামের আসায় ধান বিক্রি না করে শুকিয়ে মজুত করছেন তারা।
আঞ্চলিক সড়ক, মহাসড়ক ও পকেট সড়কসহ বাড়ির উঠন কিংবা খোলা মাঠে ধান শুকানোর ধুম পড়েছে। অপরদিকে তিন দিন ধরে বাড়তে শুরু করেছে ধানের দাম।

কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর দিনাজপুরে মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৫১৬ হেক্টর জমির ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষকরা। সে হিসেবে ৪০ শতাংশ জমির ধান ঘরে উঠেছে। বাকি ৬০ শতাংশ ধান এখনও মাঠেই রয়েছে।
বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের ভরা মৌসুমে কৃষকের মধ্যে বোরো ধান বিক্রির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। প্রখর রোদ থাকায় এবং ঝড় বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা ধান কেটে শুকিয়ে বাড়িতে মজুত করছেন। দাম বাড়লে সুবিধা মতো বিক্রি করবেন তারা। যা অন্যবার ঝড়বৃষ্টির কারণে হয়ে উঠতো না। ধান সংরক্ষণ করতে না পারায় ভিজা ধান ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো দাম দিতেন। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

ফুলবাড়ী উপজেলার নারায়নপুর এলাকায় সড়কের ওপর ধান শুকাতে দেন মাহাবুর রহমান। তিনি বলেন, অন্যবার ঝড়বৃষ্টির কারণে ধান শুকানো যেত না। ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে হত। এবার প্রচুর রোদ, দান খড় সব শুকাতে পারছি। সুবিধা মতো বিক্রি করতে পারবো। আশা করি দাম ভালো পাওয়া যাবে। এছাড়া খড় শুকাতে পারায় গো-খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে পড়তে হবে না। তাই আমরা খুব খুশি।
ফুলবাড়ী জামতলী বাজারের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, রোদে জ্বলে পুড়ে হলেও এবার বোরো ধান ঘরে তুলতে পারছি। অথচ এ ধান ঘরে রাখা তো দূরের কথা, ধান বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে ধরনা দিতে হত। টাকাও নিতে হতো ভেঙে ভেঙে। এবার তারা আমাদের কাছে ধরনা দেবে ধানের জন্য। টাকাও পাবো নগদ। তাই রোদে কষ্ট হলেও আমরা খুশি।’

বারাই-জামতলী রাস্তায় শুকনো ধান বস্তায় ভরছিলেন আকলিমা। তিনি বলেন, ‘ধান বিক্রি করি হামারে ঘরত খাবার থাকছল না। এবার ওইদ (রোদ) উঠিছে তইন্নে এনা ধান শুকাই থুবা পারিম। পরে বিকাইলে (বিক্রি) এনা দরও পাম। এইবার আল্লাহ হামাক সুযোগ দিছে, ওইদত (রোদে) হামার কষ্ট হইলেও খুশি।

শুক্রবার সাপ্তাহিক হাট ছিল সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের পাঁচবাড়ী। খুব একটা ধান উঠেনি। তাই দামও ছিল চড়া। ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, যে ধান বিক্রি হচ্ছিল ২২০০ টাকা বস্তা, আজ কিনতে হলো ২৪০০ টাকায়। তিনদিন ধরে ধানের দাম বাড়তির দিকে। রোদ হওয়ায় কৃষক ধান শুকিয়ে রেখে দিচ্ছে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বিক্রি করছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধান ভালো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। অন্যবার ধানের দাম পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কৃষকের অনেক ক্ষোভের কথা সকলের জানা। এবার কৃষকের দাম নিয়ে অন্তত কোনো অভিযোগ কাউকে শুনতে হবে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা ধান ও খড় শুকিয়ে রাখতে পারছেন। সুবিধা মত বিক্রি করতে পারবেন।
এসজে/এমএস