ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ হত্যা মামলার সব আসামি খালাস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, ২২ মে ২০২৩
হত্যাকাণ্ডের শিকার ছাত্রলীগ নেতা মিরাজুল ইসলাম মিরাজ

লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলোচিত মিরাজুল ইসলাম মিরাজ (২৬) হত্যা মামলার ১২ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২২ মে) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় খালাসপ্রাপ্ত ১১ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, তানজিল হায়দার রিয়াজ, জাহাঙ্গীর, নুরে হেলাল মামুন, রিয়াজ, মোস্তফা কামাল, হারুন প্রকাশ, জহির সর্দার, রফিক উল্যাহ সোহাগ, রাকিব হোসেন রাজু, মুসলিম, মাসুদ ও সোহেল। এরমধ্যে তানজিল শুরু থেকেই পলাতক।

এদিকে, রায় শুনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন নিহতের বাবা মামলার বাদী আবুল কালাম এবং ভাই রিয়াজ হোসেন। হতাশা নিয়েই তারা আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। রিয়াজের দাবি, তার ভাইকে রাজনৈতিক কারণেই হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে কখনো তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ হত্যা মামলা সিআইডিতে

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, হত্যার ঘটনায় সাক্ষীরা আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। আদালতে অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। কোনো আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেননি। এতে আদালত আসামিদের মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

Lakshmipur-2.jpg

তবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী আসামিদের খালাসের ঘটনায় রায়পুর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতা না থাকার কারণে সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে ভয় পেয়েছেন। যার কারণে সত্যিকারের খুনিরাও বেঁচে গেছে। এ রায় হতাশাজনক। মিরাজ হত্যাকাণ্ড ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের পাশে দাঁড়াননি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নয়। উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও খেলাঘরের জেলা সভাপতি প্রফেসর মো. মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, একটি মামলার বিচার কার্যক্রমে কয়েকটি পক্ষ (বাদী, বিবাদী, সাক্ষী, পুলিশ বা তদন্তকারী ও বিচারক) থাকে। এ পক্ষগুলো যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে সঠিক বিচার পাওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, মিরাজকে কেউ না কেউ খুন করেছে। কিন্তু আসামিরা খালাস পেয়ে যাওয়ায় হত্যাকারী শনাক্ত হয়নি। এভাবে আসামিরা খালাস পেয়ে যাওয়াতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। খুনি সন্ত্রাসীরা উৎসাহ পাবে। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মাঝে সন্দেহ তৈরি হয়। সঠিক তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে খুনিদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনলে ন্যায্য বিচার পাবে ভুক্তভোগীরা।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ নেতা রোহান হত্যা মামলার সব আসামি খালাস

আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, মিরাজ হত্যা মামলায় একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। সবশেষ ২০১৬ সালের ৫ মে তদন্ত কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন আদালতে ১২ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিট সূত্রে জানা যায়, আসামিদের সঙ্গে মিরাজের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। মিরাজের কাছে তাদের (আসামিদের) ব্যবসার তিন লাখ টাকা ছিল। ওই টাকা বণ্টন নিয়ে তার সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। হত্যাকাণ্ডের দুই-তিনদিন আগে আসামিরা মামলার বাদী মিরাজের বাবা আবুল কালামের মাছের দোকানে গিয়ে হামলা করেন। এসময় তারা মিরাজের খোঁজ করে হুমকি দিয়ে চলে যান। তখন তারা কালামকে স্থানীয় একটি খাবার হোটেলে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান।

এর তিনদিনের মাথায় ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জহিরের বাড়িতে মিরাজকে ডেকে নিয়ে ব্যবসায়িক কথাবার্তা বলেন। পরে কৌশলে তাকে মোটরসাইকেলযোগে ভূঁইয়ারহাটের দিকে নিয়ে যান। মাসুদ ও সোহেল তার সঙ্গী হন। পরে মিরাজের অবস্থান নিশ্চিতের জন্য মাসুদ ও সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অন্য আসামিরা। ভূঁইয়ারহাট থেকে ফেরার পথে বিকেলে কেরোয়া ইউনিয়নের ভাঁটের মসজিদের অদূরে নির্জন এলাকায় পৌঁছালে আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে মিরাজকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন। ঘটনাস্থলে প্রচুর রক্তক্ষরণে মিরাজ মারা যান। তার মাথা, কপাল, বুক ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপানোর চিহ্ন ছিল। মিরাজের সঙ্গে থাকা মাসুদ ও সোহেলকেও আঘাত করা হয়। পরে ডাক্তারি প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসুদ, সোহেলের আঘাত সামান্য ছিল। দীর্ঘ শুনানি ও ১৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার সব আসামি খালাস

মামলার নথি যাচাই ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হত্যার ঘটনার সময় লক্ষ্মীপুরসহ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী ব্যাপক সহিংস আন্দোলন করেছিল। হত্যাকাণ্ডের পরদিন জামায়াত নেতা হাফেজ ইউছুফ ও শিবির নেতা পরানসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। পরবর্তীকালে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বাদী ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। এসময় তিনি একটি সম্পূরক এজাহার দেন। এতে রাজু, হারুনসহ ১০ আসামির নাম উল্লেখ করেন। এজাহারে ঘটনার সময় মিরাজের সঙ্গে থাকা মাসুদ, সোহেলকেও আসামি করা হয়।

এদিকে, ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে তাহের হত্যা, ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট ছাত্রলীগ নেতা রুবেল হত্যা, ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি মোরশেদ হত্যা, ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর মিজান হত্যা মামলার রায় দেওয়া হয়। এসব মামলার সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিদের খালাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

কাজল কায়েস/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।