খুলনা রেলস্টেশন নির্মাণে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি


প্রকাশিত: ০৮:২৩ এএম, ১২ মার্চ ২০১৬

অর্ধশত কোটির বেশী টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন খুলনার আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশাল বাজেটের এই স্থাপনার তদারকি করছেন একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী। ফলে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্নের উঠছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং খুলনাবাসী খুলনা রেলস্টেশন নির্মাণে যোগ্যতাসম্পন্ন বিএসসি প্রকৌশলী (ইনিঞ্জিনিয়ার) নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয়েছে খুলনায় আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন কাজের ঠিকাদারি পায়। এক বছর আগে শুরু হওয়া স্টেশনের পাইলিং এর কাজে ইতোমধ্য ৬৯৩ টি পাইলিং করা হয়েছে।  

এরমধ্যে প্রতিটি প্লাটফর্মের জন্য ২৮৮টি এবং স্টেশন ভবনের জন্য ৪০৫টি পাইলিং করা হয়েছে। ইতোমধ্য তিনটি প্লাটফর্মের মধ্যে শেডের দুটি সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া পিডব্লিউডি অফিস ও গোডাউন এবং লোকোসেড ভাঙার কাজ শেষ না হওয়ায় তিন নম্বর প্লাটফর্মটি এখনও শুরু হয়নি। বাকি রয়েছে রেল লাইনের স্লিপার উঠানোর কাজও। স্টেশন ভবনের পাইলিং শেষ হয়ে এখন চলছে পাইল ক্যাবের কাজ। এমনকি স্টেশন ভবনের একতলা পর্যন্ত কলাম উঠে গেছে বলে জানান নির্মান কাজের সব সময়ের তদারককারী কর্মকর্তা রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) হাফিজুর রহমান। তবে যথাযথ তদারকি না থাকায় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই তড়িঘড়ি করে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ে হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন ভবনের পাশে স্টেশন ভবন ও এর অদূরেই প্লাটফর্ম নির্মাণ হচ্ছে। নকশা অনুযায়ী খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশেই হবে স্টেশনের গেট। এছাড়া রেলের লাইন হবে ৭টি। রেল স্টেশনের প্লাটফর্ম হবে ৩টি এবং স্টেশন ভবন হবে ৩ তলা বিশিষ্ট। নকশা অনুযায়ী স্টেশন ভবনের আকার হবে দৈঘ্য ৪৮ মিটার ও প্রস্থ ৪৫ মিটার এবং প্রতিটি প্লাটফর্মের দৈর্ঘ্য ১২০০ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট হবে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মেয়াদ ধরা হয়েছে আড়াই বছর। সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা।

বর্তমানে রেলওয়ের প্রকৌশলী ছাড়াও মডার্ন ইনঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানার্স নামের একটি প্রকৌশল সংস্থা কাজের তদারকি করছে বলে জানা গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিজেদের একজন প্রকৌশলী থাকলেও তিনি অনিয়মের কারণে চলে গেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে স্থানীয় বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী ও নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সামছুজ্জামান মিয়া স্বপন অভিযোগ করে বলেন, এতো বিশাল একটি কাজের তদারকির যেনো কেউ নেই। সবই চলছে একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী দিয়ে। এখানকার কাজের মান নিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোনো পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করেননি। কাজের মান খারাপের বিষয় নিয়েই তাদের কাছে অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগকারীরা আরও বলেন, রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসে একবার আসেন। তিনি কাজের এলাকা ঘুরে দেখেন আর চলে যান। কাজের কোনো তদারকি তিনি করেন না। এছাড়া যশোর থেকে একজন প্রকৌশলী আসলেও তিনিও কাজ দেখাশোনা না করেই চলে যান। কাজের তদারকি না থাকায় নিম্নমানের সামগ্রি দিয়েই তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম আধুনিক রেল স্টেশন।

তবে সব কাজ ঠিক মতই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খুলনা রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, রেলওয়ের বিভাগী প্রকৌশলী (রাজশাহী) মাসে একবার কাজের তদারকি করতে আসেন। এছাড়া সহকারী প্রকৌশলী (পাকশী) সপ্তাহে ২/৩ দিন কাজের তদারকি করতে আসেন।

আলমগীর হান্নান/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।