একঘণ্টা বিদ্যুৎ, দেড়ঘণ্টা লোডশেডিং

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৭:২৬ পিএম, ০৭ জুন ২০২৩

লক্ষ্মীপুরে চলমান লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রাহকদের দাবি, একঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে লোডশেডিং থাকে দেড়ঘণ্টারও বেশি। এতে গরমে হাসপাতালে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

সরকারিভাবে তিনদিন প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে।

লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় রায়পুর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ে হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মৌখিকভাবে উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সাহাদাত হোসেন রায়পুর থানাপুলিশকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বলেছেন। বুধবার (৭ জুন) বিকেলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে গেলে শিশু ওয়ার্ডের সামনে মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায় স্বজনদের। গরম অসহ্য যন্ত্রণায় রয়েছেন বলে জানান রোগী ও তাদের স্বজনরা।

লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, তাদের অধীনে প্রায় ৩৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তারা সবাই লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাসিন্দা। পিকআওয়ারে ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৯ মেগাওয়াট। এতে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলা সদর, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় তাদের প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এতসংখ্যক গ্রাহকের বিপরীতে কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন ও কত মেগাওয়াট পাচ্ছেন তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম জাকির হোসেন।

তবে রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ৯৮ হাজার ৮৫৬ জন গ্রাহক রয়েছে। পিকআওয়ারে ১৮ মেগাওয়াট ও অফ পিকআওয়ারে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে পিক আওয়ারে মাত্র ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সমসেরাবাদ এলাকার বাসিন্দা রহিমা বেগম ও শিউলি আক্তার জানায়, শিশুদের নিয়ে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যাচ্ছে না। শরীরে ঘামাছি উঠছে। সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন আয়েশা বেগম, শাহিনুর বেগম ও মনতাজের নেছা জানান, দুদিন ধরে তারা হাসপাতালে রয়েছেন। চিকিৎসা ভালো হলেও প্রচণ্ড গরমে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। একঘণ্টা বিদ্যুৎ দিলে দেড় দুই ঘণ্টা আর আসে না। জেনারেটরে ধীরে ধীরে পাখা চলে। শরীরে বাতাস লাগে না। শিশুদের সুস্থ করতে এসে এখন তারাই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

চকবাজার এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন, জামাল উদ্দিন ও আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিঘণ্টায় লোডশেডিং হয়। ঈদ সামনে দোকানে মালামাল ওঠানো হয়েছে। অন্ধকার দোকানে ক্রেতারা প্রবেশ করেন না। আইপিএসের ব্যাটারিতে ঠিকমতো চার্জ হয় না। অসহনীয় গরমে দোকানে বসাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, লোডশেডিং বেড়েছে। এতে রোগীদের পাশাপাশি আমাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী হোসেন মাহমুদ শামীম ফরহাদ বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় আমরা কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এজন্য লোডশেডিং বেড়েছে। আশা করি শিগগির এ সমস্যার সমাধান করা হবে।

কাজল কায়েস/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।