নাদিমকে ঠিক করা ‘এক মিনিটের বিষয়’, বলেছিলেন বাবু চেয়ারম্যান
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে থলের বিড়াল। তাকে শেষ করতে আগেই ছক কষা হয়েছিল। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেরই জানা ছিল। তবুও চুপ ছিলেন তারা। তাই তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
মঙ্গলবার (২০ জুন) সকাল থেকে এমন একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি নাদিম হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যানের বলে দাবি স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: এলাকায় ‘ত্রাস’ ছিলেন চেয়ারম্যান বাবু
দুই মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ওই অডিও ক্লিপে চেয়ারম্যানকে বলতে শোনা যায়, ‘নাদিম সাংবাদিককে ঠিক করতে এক মিনিটের বিষয়’। এসময় উপস্থিত সবাইকে হাততালি দিয়ে তার ওই বক্তব্যকে স্বাগত জানাতে শোনা যায়।
উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কথা শোনে না, এমন দুঃসাহস কার রয়েছে। যতক্ষণ আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আছে, যতক্ষণ সংসদ সদস্য রয়েছে, যতক্ষণ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি রয়েছে, তার বাইরে একটি কথা বলার এখতিয়ার নাই কারও’।
তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘যাদের কোনো ক্ষমতা নাই, যাদের কোনো দাপট নাই, যাদের কোনো পয়সা নাই তাদের কোনো পোস্ট-পদবি দিয়েন না। মূলত গরিব লোকের রাজনীতি করতে নাই। গরিব লোকরে কেউ দেখতে পারে না, গরিব লোকরে তো আল্লাহই দেখতে পারে না, আমি দেখবো কী করে’! এসময় উপস্থিত সবাই আবারও হাততালি দিয়ে তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেন। অডিওর শেষেরদিকে একজন নেতাকে এক মিনিটের মধ্যে তার (চেয়ারম্যান) বক্তব্য শেষ করতে বলতে শোনা যায়।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক নাদিম হত্যা: ইউপি চেয়ারম্যান বাবু বরখাস্ত
স্থানীয়রা জানান, বাবু চেয়ারম্যান একজন দুর্ধর্ষ লোক। যে কারণে তার ভয়ে মুখ খোলার সাহস পেতো না কেউ। তার সব অপকর্মের সহযোগিতা করতেন উপজেলার কিছু হেভিওয়েট নেতা। যাদের পথের কাঁটা ছিলেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম। তাই তাকে মেরে ফেলার জন্য আগেই ছক কষা হয়েছিল। এই বক্তব্যটি তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। এই বক্তব্যটি গত দুই-আড়াই মাস আগে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে দিয়েছিলেন বাবু। ওইসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন জাগো নিউজকে বলেন, নাদিম সংবাদ প্রকাশ করায় দুই-আড়াই মাস আগে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে এই বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান বাবু। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ অনেক নেতাকর্মীই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কেউ তার এই বক্তব্যকে প্রতিবাদ করেননি বরং হাততালি দিয়ে সমর্থন করেছেন। আজকে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংবাদিক নাদিম হত্যার দায় এড়াতে পারে না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগম বলেন, ‘চেয়ারম্যান বাবু অনেক খারাপ প্রকৃতির লোক ছিলেন’। তাহলে তিনি কীভাবে পদ-পদবি পেলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি ছয় মাস হলো উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পেয়েছি, এর আগে ২০ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন’। এলাকায় শোনা যাচ্ছে আপনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তখন তিনি বলেন, ‘আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে’।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, এ ধরনের অডিও তিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুনেছেন। তবে এই বিষয়ে তার আগে জানা ছিল না। নাদিম হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে চেয়ারম্যান বাবু পাঁচদিনের রিমান্ডে আছেন।
সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি, একাত্তর টিভি ও দৈনিক মানবজমিনের বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি এবং জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানি নাদিম গত ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক নাদিম হত্যায় চেয়ারম্যান বাবু ৫ দিনের রিমান্ডে
পরদিন (১৫ জুন) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রাত ১০টায় তার মরদেহ পৌর শহরের বাসায় এসে পৌঁছায়। পরে ১৬ জুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার গ্রামের বাড়ি নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নে গুমেরচরে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মো. নাসিম উদ্দিন/এমআরআর/এমএস