কোরবানি সামনে কমছে না মসলার উত্তাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৪:৩২ পিএম, ২৫ জুন ২০২৩

>ব্যবসায়ীদের দাবি ডলার সংকটে এলসি বন্ধ
>ব্যাংক বলছে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি হচ্ছে

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বগুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলোতে মসলার বাজার উত্তাপ ছড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ডলার সংকটে এলসি বন্ধ থাকায় সরবারহ কম, তাই মসলার দামও এবার বাড়তি। তবে ব্যাংকগুলো বলছে ভিন্ন কথা। গত একমাসে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ মসলা আমদানি হয়েছে বলে দাবি তাদের। এরপরও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেও আগের চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে মসলা। তবে ক্রেতারা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং চালু করলে দাম হাতের নাগালেই থাকবে।

ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। যাদের এখনো পশু কেনা হয়নি তারা ছুটছেন হাটে। বাসায় রাখা পশু জবাই ও মাংস-হাড় কাটার অস্ত্র ঘষামাজা করে নেওয়া হচ্ছে। সাধ্য অনুযায়ী যে যার মতো কোরবানির আয়োজনটা গুছিয়ে এনেছেন প্রায়। ঈদুল আজহার কেনাকাটার তালিকার শেষটা রকমারি মসলা। কারণ এ ঈদে মসলার কোনো বিকল্প নেই। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রতিটি পরিবারের তালিকায় একটু বেশি পরিমাণ মসলার চাহিদা থাকে।

গৃহিণীদের বায়না পূরণে কর্তারা ব্যস্ত মসলা কেনায়। তালিকা ধরে ধরে দোকান থেকে মসলা কিনতে হচ্ছে বাড়ির কর্তাদের। আর এ সুযোগে তেতে উঠেছে মসলার বাজার। প্রায় দিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মসলা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া পৌর শহরের ফতেহ আলী বাজার, রাজাবাজারসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে এখন মসলার বাড়তি দাম চলছে। সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। এই বর্ধিত দামকে সিন্ডিকেটের খেলা বলছেন ক্রেতারা।

মসলা ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের বাজারে সাদা এলাচ, কালো এলাচ, দারচিনি, জিরা, তেজপাতা, ধনিয়া, লং, গোল মরিচ, আদা, রসুন, মরিচ, হলুদ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া এবং পেঁয়াজসহ সব ধরনের মসলা জাতীয় পণ্য পাওয়া যায়। প্রত্যেক কোরবানির ঈদেই একটু করে মসলার দাম বেড়ে যায়। এবারো তেমনটা হয়েছে। কিছু মসলার দাম বেশি বেড়েছে। আবার অনেক মসলার দাম তেমন একটা বাড়েনি। কিছু কিছু মসলার দাম স্থিতি আছে।

বগুড়ার বাজারে দেখা গেছে প্রকারভেদে এবার সাদা এলাচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০০-১৭০০ টাকা। গত ঈদে এলাচের দাম ছিল সাড়ে ১২০০ টাকা কেজি। এছাড়া কালো এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২০০ টাকা কেজি দরে। আগে এর দাম ছিল ৯৬০ টাকা কেজি। এছাড়া গত ঈদের ৩২০ টাকার দারচিনি এবার ৪০০ টাকা, ৩৮৫ টাকার জিরা দ্বিগুণের বেশি ৮২০ টাকা, ৩৮০ টাকার কিশমিশ ৫০০টাকা, ১৪০ টাকার তেজপাতা ২০০ টাকা, ৫৫০ টাকার গোল মরিচ এখন ৭৫০ টাকা, ১০৫০ টাকার লবঙ্গ ১৫৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ধনিয়া গুঁড়া ৩০০ টাকা, গোটা ধনিয়া ২৬০ টাকা, কালোজিরা ২৮০ টাকা, কাজুবাদাম ৮০০ থেকে বেড়ে ২০০০ টাকা ও কাঠবাদাম ৮৫০ টাকা, শুকনা মরিচ ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ৮০ টাকার এক কেজি আদা দাম বেড়ে ৩২০-৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকা হিলিতে বরাবরই মসলার দাম কিছুটা কম থাকে। এবার তা হয়নি। হিলি বাজারে গাইবান্ধা থেকে মসলা কিনতে আসা আব্দুল আলিম নামের একজন ক্রেতা বলেন, তুলনামূলক কম দামে মসলা পাওয়া যায় তাই প্রতি ঈদে মসলা কিনতে হিলিতে আসি। কিন্তু এবারে মসলার দাম অনেকটা চড়া। গতবারে যে সাদা এলাচ ১৯০০ টাকা দরে কিনেছি এখন সেই এলাচ ২৪০০ টাকা কেজি দরে কিনলাম। জিরা এক কেজির প্যাকেটের দাম ৪৫০ টাকা ছিল। এখন সেটা বেড়ে গিয়ে ৮৫০ টাকা কেজি হয়েছে।

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/bo-2-20230625163202.jpg

হিলি বাজারের মসলা বিক্রেতা মোবারক হোসেন বলেন, প্রতি কেজি জিরা ৮২০ থেকে ৮৫০ টাকা, সাদা এলাচ মানভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, গোলমচির ৮০০, দারচিনি ৪৪০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, শুকনো মরিচ ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।

তার দাবি, সরবরাহ কম আর বিশ্ব বাজারে মসলার দাম বেশি, তাই এখানকার বাজারেও দাম কিছুটা বেড়েছে।

হিলি স্থলবন্দরের মসলা আমদানিকারক ফুরকানুল হোসেন জানান, ঈদে মসলার চাহিদার কথা বিবেচনায় জিরা, আদা ও রসুন আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।

বগুড়া পৌর শহরের রেল বাজার এলাকার মসলা ব্যবসায়ী কার্তিক চন্দ্র রায় বলেন, এক সপ্তাহ আগে প্রতিটি মসলার দাম ২০০-৩০০ টাকা করে কম ছিল। দামের এই ওঠানামার কারণে ব্যবসায়ীরা কেউই অতিরিক্ত মসলা স্টক করছেন না। এ কারণে বাজারদর কিছুটা টালমাটাল। তবে আমদানি বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

বগুড়ার রাজাবাজারের মসলা ব্যবসায়ী আনসার আলী বলেন, দেশের বাজার পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। এলসি বন্ধ থাকায় নিয়মিত আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। আগে যেখানে দু-তিন বস্তা পাইকারি মসলা কেনা যেতো সেখানে এখন ৫-৬ কেজি মসলা ক্রয় করা যায়। যার ফলে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

মসলা কিনতে আসা সোহানুর রহমান বলেন, বগুড়ার মসলার বাজারে আগুন ঝরা অবস্থা। ঈদে প্রয়োজন মতো মসলা কেনা সম্ভব হচ্ছে না বাড়তি দামের জন্য। বাজারে কোনরকম মনিটরিং নেই। যার যেমন খুশি লুটেপুটে খাচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় প্রয়োজন মতো সব কিনতে পারলাম না।

এদিকে কোরবানিকে সামনে রেখে গত ২০ দিনেই দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে রেকর্ড ৪ হাজার টন দারুচিনি, ১০২২ টন এলাচ, ৬৩৭ টন লবঙ্গ এবং ৮৬১ টন জিরা আমদানি হয়েছে। এ নিয়ে গত ৬ মাসে ৭১ হাজার টন মসলা আমদানি হলেও নানা অজুহাতে দাম কমছে না। অথচ অর্থবছরের শুরুতে অন্য সব পণ্যের মতো দেশে মসলার বাজারও স্থবির হয়েছিল। ডলার সংকটের কারণে মসলা আমদানি কমে যায়। তবে ব্যাংকগুলোতে ডলারের জোগান বাড়ায় মসলা আমদানির এলসি খোলার সুযোগ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মসলার আমদানি যেমন বেড়েছে, তেমনি জোগান বাড়ায় সরগরম মসলার বাজার।

তবে ঈদ সামনে রেখে রেকর্ড পরিমাণ মসলা আমদানি হলেও তার বিপরীতে মসলার দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিশেষ করে এলাচ, দারুচিনি ও গোলমরিচের দাম সামান্য পরিমাণে কমলেও জিরা এবং লবঙ্গের দাম বাড়ছে।

জিরার দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মসলা ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট অমর কান্তি দাস বলেন, ভারতে জিরার দাম চড়া। সেখানেই যদি জিরার দাম ৪৫০ টাকা হয়। তাহলে বাংলাদেশের বাজারে তার দাম ঠেকে ৭০০ টাকায়। এর জন্যই মূলত দাম বেশি। এছাড়া কোনো কারণ নেই।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে ভারত থেকে জিরাসহ অন্য মসলা ঢোকার সুযোগ পেলে তাহলে হয়তো বা মসলার দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক প্রতাব জাগো নিউজকে বলেন, এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন এক-দুই গাড়ি মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি হলেও এখন ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন ৫-৬ গাড়ি করে জিরাসহ অন্য মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি হচ্ছে। ফলে বন্দরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। বাজারে যথেষ্ট সরবরাহ থাকায় দাম বাড়ার কারণ নেই।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।