পশুভর্তি হাটে ক্রেতার অভাব

মো. আতিকুর রহমান মো. আতিকুর রহমান ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ০৯:৪৭ পিএম, ২৫ জুন ২০২৩

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঝালকাঠির বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশু উঠছে। হাটভর্তি পশু থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। কিছু ক্রেতা এলেও ঘুরেফিরে দেখে দাম যাচাই করে ফিরে যাচ্ছেন।

এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৭টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসন। জেলার ৪টি উপজেলায় প্রচলিত বিদ্যমান ৮৬টি হাটবাজারের মধ্যে নতুন এ ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। সর্বাধিক রাজাপুর উপজেলায় সাতটি, ঝালকাঠিতে সদরে পাঁচটি, নলছিটিতে তিনিটি ও কাঁঠালিয়ায় দুটি পশুর হাট বসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় গরু আমদানি ও বসন্ত রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন খামারিরা। শুধু খামারিরা নন, কোরবানির পশুর ক্রেতারাও ভাবনায় আছেন এ দুটি বিষয় নিয়ে।

খামার মালিকরা জানিয়েছেন, খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম চড়া যাবে। তবে ভারতীয় গরু আমদানি না করা হলে খামারি ও কৃষকরা লাভের মুখ দেখবেন। অপরদিকে অনেক জায়গায় গরুর দেহে বসন্ত রোগ দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।

জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঝালকাঠি জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা আছে ১৮ হাজার ১২১টি। কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে ১৮ হাজার ৮৬২টি।

কৃষক ও খামারিরা জানিয়েছেন, কেউ বাড়ির গোয়ালে আবার কেউ পারিবারিক খামারে এসব পশু মোটাতাজা করছেন। খড়ের পাশাপাশি খৈল, গমের ভুসি, ভুট্টার গুড়া, ধানের কুঁড়া, মুগের ভুসি, খড় ও বুটের খোসা খাওয়ান অনেকে। জেলার ছোট-বড় পারিবারিক পশুর খামারে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কোরবানির ঈদে এসব পশু বিক্রি করে বাড়তি আয়ের আশা করছেন তারা। তবে ভারতীয় গরু আমদানি এবং পশুর দেহে বসন্ত রোগে আক্রমণ হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে খামারিদের।
সদর উপজেলার দারাখান গ্রামের ওয়ালিউর রহমান জানান, তার পারিবারিক খামারে দেশি-বিদেশি মিলে ১০টি ষাঁড় মোটাতাজা করা হচ্ছে। এ খামারে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের পশু আছে।

সদর উপজেলার ডুমুরিয়া এলাকার কঙ্কন ব্যাপারী জানান, ১২টি গরু নিয়ে তিনি পারিবারিক খামার গড়ে তুলেছেন। এরমধ্যে চারটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী এবং কোরবানিতে বিক্রির জন্য পাঁচটি গরু আছে। বাকিগুলো বিক্রির অনুপযোগী। তবে যে পরিমাণে গো খাদ্যের দাম তাতে খরচ পুষিয়ে লাভ করাটা খুবই কষ্টসাধ্য।

পারিবারিক খামার পরিচালনাকারী সুজন সরকার বলেন, গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বছরখানেক কষ্ট করে কোরবানির জন্য গরু প্রস্তুত করেছি। কিন্তু দুশ্চিন্তা হলো যদি ভারতীয় গরু দেশে ঢুকে তাহলে আমাদের পশুর দাম কমে যাবে। কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারবো না। আবার অনেকের পশুর গায়ে বসন্ত রোগ দেখা দিয়েছে । কোরবানিতে বিক্রির উপযোগী পশুর দেহে যদি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তো আমাদের চেষ্টা, আশা, ভরসা, পরিকল্পনা সবই শেষ হয়ে যাবে।

ক্রেতা শামসুল আলম বলেন, শহরের মধ্যে বাসা। গরু রাখার জায়গা নেই। তবু কোরবানির আগে গরু কিনে লোক রেখে প্রতিবছর লালন পালন করতাম। এ বছর শুনছি বসন্ত রোগের আক্রমণ। আগে গরু কিনে রাখলে যদি রোগাক্রান্ত হয় তাহলে তো সেই পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে না। আবার কিনতে হবে। কিন্তু বাজেট তো আর ডাবল রাখা হয়নি।

আরেক ক্রেতা নুরুল হুদা বলেন, দেশি গরুর চাহিদা বেশি, তাই অন্য গরুর চেয়ে তুলনামূলক দেশি গরুর দামও বেশি। যদি ভারতীয় গরু আসে তাহলে দেশি গরুর ওপর চাপ কমবে, দামও কমবে সে অপেক্ষায় আছি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ডা. মো. ছাহেব আলী জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় প্রায় ১৯ হাজার পশু ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আমরা আশা করছি। জেলার চার উপজেলার প্রতিটি খামার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ ওষুধপত্র দিচ্ছি। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করে আমাদের খামারিদের লোকসানের মুখে না ফেলে।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।