হাওরে পানির অভাবে নেই ঈদের আমেজ
হাওরে পানি আসার কথা আরও একমাস আগে। কিন্তু এখনও তেমন পানি না থাকায় কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। ফলে ঈদ আনন্দও নেই জেলেদের ঘরে।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের কাখশ্রী গ্রামের জেলে ওমর ফারুক বলেন, আমরা হাওরের মানুষ, পানিই আমাদের পয়সা। হাওরে পানিই নেই, জেলেদের ঈদও নেই। আমরা ঈদ উপলক্ষে কোনো অনুদানও পাইনি। চেয়ারম্যান মেম্বার দুই-তিনবার করে কার্ড নিয়েছে, কিন্তু কোনো অনুদান দেয়নি।
তিনি বলেন, গতবছর এ সময় একেকজন জেলে ৫০ হাজার টাকা আয় করেছিল। কারণ প্রথম পানিটা আসার সময়ই মাছ বেশি ধরা পড়ে। এ সময়ই ভালো আয় হয়। এবার সেটাই করতে পারেনি জেলেরা।
বালিখলা ঘাট মাছের বাজার থেকে মাছ কিনে অনলাইনে বিক্রি করেন জহির এ. আব্বাস নামের এক ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, টাটকা মাছ কিনতে প্রতিদিনই তিনি হাওরে যান। বছরের এ সময়ে হাওর পানিতে পূর্ণ হয়ে তার সত্যিকারের রূপ নেয়। কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুমে হাওর অনেকটাই জলশূন্য। এতে করে জীবিকা সংকটে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের মৎস্যজীবীরা।
কিশোরগঞ্জ মৎস্য বিভাগ বলছে, চলতি বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ও উজানের ঢল না আসায় হাওরে পানি কম। জেলায় ৭০ হাজার ৪৯৩ জন জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। চলতি বছর কিশোরগঞ্জের হাওরে পানি কম থাকায় কেবল নদীতে মাছ শিকার করতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের।
সরেজমিনে করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাওরের দনীর আশপাশের জলাশয়ে কিছুটা পানি আছে। বাকি হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো শুকনো।

ঘাটের ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাঝি হামিদুর ও ফাইজুল জাগো নিউজকে জানান, পর্যটকদের আশায় নিজের জমানো কিছু টাকা ও ঋণ নিয়ে সাড়ে লাখ টাকায় নৌকা তৈরি করেছেন। এখনও হাওরে পানি আসেনি, তাই পর্যটকও আসছে না। তাদের ইনকামও বন্ধ। সামনে ঈদ, চলতে কষ্ট হবে।
করিমগঞ্জ উপজেলার চং নোয়াগাঁও গ্রামের জেলে মোতালেব জানান, এর আগে কোনো বছর এমন পানিশূন্য হাওর দেখেননি। বৈশাখ মাস থেকে নদী, বিল, খাল ভরে গিয়ে হাওর জুড়ে পানি ফুলে-ফেঁপে উঠতো। কিন্তু এবার আষাঢ় মাস শেষের দিকে, এখনো হাওরে ঠিকমতো পানি হয়নি।
জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল বলেন, চলতি বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কিশোরগঞ্জের হাওরে পানি অনেক কম। নদী ও খাল-বিলের পানিতে মাছ ধরতে হচ্ছে। বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে পানি থাকলে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত মাছ পেতেন। পানিশূন্যতায় হাওরের মৎস্য সম্পদ ও জেলেদের জীবিকা সংকটে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, এপ্রিল-মে মাস মাছের প্রজননকাল। হাওরে ওই সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকলে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে হাওরের মৎস্য সম্পদের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য প্রজননকালে মাছ ধরা বন্ধ ও ওই সময় বেকার থাকা মৎস্য বিভাগের আওতাধীন জেলেদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে কিশোরগঞ্জের হাওরে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ বৃদ্ধি পাবে। জেলেদের জীবিকা প্রাণ ফিরে পাবে।
ঈদ উপলক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে দরিদ্র জেলেদের ভিজিএফ ও ভিজিডি চালের আওতায় আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এফএ/এএসএম