কোরবানির মাংস সংগ্রহে ঈশ্বরদী স্টেশনে তারা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ২৯ জুন ২০২৩

পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ প্রান্তে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ৫০ জন বসে আছেন। সময় পাড় করছেন গল্প করে। তাদের উদ্দেশ্যে দুপুর ১টার পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করা।

স্টেশন ঘুরে জানা যায়, ঈদুল আজহার আগের দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তারা এখানে আসেন। রাতও স্টেশনেও এর আশেপাশেই কাটিয়েছেন। ঈদের দিন মাংস সংগ্রহ করে সন্ধ্যার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা।

স্টেশনে বসে থাকা আব্দুর রহমান (৬৫) জানালেন, তারা সবাই চাটমোহর রেলস্টেশন বাজার বস্তি এলাকা থেকে এসেছেন। প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের আগের দিন আসেন। ঈদের দিন কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে রাতে সড়ক পথে চাটমোহরে ফিরে যান।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকাল ১০টায় প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, কেউ সেমাই-রুটি আবার কেউ খিচুড়ি-মাংস খাচ্ছেন। ঈদের সকালে ভালো খাবার পেয়ে তারা বেশ উচ্ছ্বাসিত। পৌর শহরের বাসাবাড়ি থেকে এসব খাবার তারা সংগ্রহ করেছেন। এদের অনেকেই এখনো খাবার সংগ্রহে কাজে রয়েছেন। আবার অনেকেই এদিক ওদিন ঘুরাঘুরি করছেন। দুপুর ১টার পর এরা পাঁচ সাত জনে গ্রুপ হয়ে মাংস সংগ্রহের জন্য বাসাবাড়িতে যাবেন।

আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ঈদ আনন্দের বার্তা নিয়ে আসেনি

স্টেশনের বসে থাকা মর্জিনা বেগম জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি পাবনার চাটমোহর স্টেশনের রেল বাজারে। আমি প্রায় ২০ বছর ধরে প্রতি কোরবানির ঈদ ঈশ্বরদীতে কাটাই। ঈদের দিন মাংস সংগ্রহ করে সন্ধ্যার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ঈশ্বরদীতে এলে কোরবানির মাংস সংগ্রহের পাশাপাশি ঈদের নামাজের পর কবরস্থানে সামনে গিয়ে বসি। সেখানে স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে এসে অনেকেই দান খয়রাত করেন।

একই এলাকায় আছিরন বেগম (৭০) বলেন, আমরা গরীব মানুষ। চাটমোহরের রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় ঘর তুলে থাকি। কোরবানির ঈদ এলে আমার মতো এমন দুই শতাধিক দুস্থ ও অসহায় মানুষ ঈশ্বরদীতে আসেন। সবাই আগের দিন রাতে অথবা ভোরে ঈশ্বরদীতে এসে পৌঁছান। অনেকেই স্টেশনের প্ল্যাটফরমের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। দিন শেষে প্রত্যেকেই চার-পাঁচ কেজি পর্যন্ত মাংস সংগ্রহ করেন।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বনপাড়া এলাকার আব্দুস সাত্তার (৭০) বলেন, কোরবানির ঈদে ঈশ্বরদীতে এলে বেশি মাংস সংগ্রহ করা যায়। আমরাতো টাকার অভাবে গরুর মাংস কিনে খেতে পারি না। কোরবানির ঈদ এলে এখান থেকে মাংস করে বাড়িতে নিয়ে মনের সাধ মিটিয়ে খাই। আমি পাঁচ ছয় বছর ধরে এখানে আসি। অন্য এলাকার চেয়ে এখানে কোরবানির মাংস বেশি সংগ্রহ করা যায়। সেজন্য আমার মতো অসংখ্য মানুষ মাংস সংগ্রহ করতে আসেন।

আরও পড়ুন: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ঈদুল আজহা উদযাপন

ঈশ্বরদী রেলস্টেশনের সুপারিন্টেনডেন্ট (এসএস) মহিবুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই অতিদরিদ্র এসব মানুষগুলো মাংস সংগ্রহের জন্য ঈশ্বরদীতে আসে। স্টেশনে রাত্রি যাপনের নিয়ম নেই। বৃষ্টি-বর্ষার দিন রাতে কখনো কখনো তারা প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নেয়।

শেখ মহসীন/জেএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।