নিখোঁজের ২২ বছর পর সন্তানদের কাছে ফিরলেন মা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২৩
বড় ছেলে ছাড়া কাউকে চিনছেন না মাজেদা খাতুন

বৃদ্ধা মাজেদা খাতুন ২২ বছর আগে নিখোঁজ হন। বছরের পর বছর খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি স্বজনরা। তার আট সন্তান ভেবেছিলেন মা বোধহয় আর বেঁচে নেই। অবশেষে মাকে ফিরে পেয়েছেন তারা। তবে বড় ছেলে ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারছেন না তিনি।

মাজেদা খাতুন পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের বোদাপাড়া গ্রামের মৃত বছির উদ্দীনের স্ত্রী। শুক্রবার (১৪ জুলাই) মাজেদার পরিবারের লোকজন খবর পান তিনি বেঁচে আছেন এবং চার বছর ধরে তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় সাবেক এক ইউপি সদস্যের বাড়িতে অবস্থান করছেন। এরপর সন্তানসহ স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তিনি বড় ছেলে ফজলুলের বাড়িতে আছেন।

রোববার সকালে মাজেদা খাতুনের বড় ছেলে ফজলুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে একটি চেয়ারে তিনি বসে আছেন। তাকে দেখতে প্রতিবেশীসহ শতাধিক মানুষ ভিড় করেছেন। চারপাশ ঘিরে রেখেছেন স্বজনরা।

মাজেদা খাতুনের আট সন্তানের মধ্যে চার ছেলে এবং চার মেয়ে। সবার বিয়ে হয়েছে। পরিবারের সবাই মায়ের পাশেই আছেন। এদের মধ্যে বড় ছেলে ফজলুল হক ছাড়া অন্য সন্তানদের চিনতে পারছেন না তিনি।

jagonews24

মাজেদা খাতুনের বড় ছেলে ফজলুল হক বলেন, ‘২০০১ সালে মা নিখোঁজ হন। তখন আমার বয়স ছিল ২০ বছর। সবেমাত্র বিয়ে করেছিলাম। মা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তখন আমার চার ভাইবোন অনেক ছোট ছিল। তারা মায়ের আদর-যত্ন সেভাবে পায়নি। বছরের পর বছর মাকে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাইনি। একপর্যায়ে ভেবেছিলাম মা বেঁচে নেই। এখন মাকে ফিরে পেলেও আমাকে ছাড়া কাউকে চিনতে পারছেন না।’

ফজলুল হকের মেয়ে ফারজানা বলেন, ‘আমার দাদিকে কখনো দেখিনি। তিনি বেঁচে আছেন এটাও জানতাম না। পাড়ার অন্য দাদিদের কথা বলার সময় দাদির কথা মনে পড়তো। এখন দাদিকে পেয়েছি, এটা আমাদের পরিবারের জন্য অনেক বড় পাওয়া।’

মাজেদা বেগমের ছোট ছেলে মফিদার রহমান (২৮) বলেন, ‘আমার বয়স তখন পাঁচ বছর ছিল। এতদিন পর মাকে পেয়েছি। কিন্তু মা আমাকে চিনতে পারছেন না। মা এখনো মানসিকভাবে সুস্থ নন। তিনি সুস্থ হলে সবাইকেই চিনতে পারবেন বলে আশা করি।’

স্থানীয় নুরুজ্জামান বলেন, ‘মাজেদা সম্পর্কে আমার চাচি। তার ফিরে আসার খবরে ছুটে এসেছি। আমার মতো অনেকেই তাকে দেখতে ফজলুল হকের বাড়িতে ভিড় করছেন। তবে তিনি এখনো মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হচ্ছে। তার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।’

সাতমেড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ওই নারীর সন্ধান পাওয়ার পর তার ছেলেরা আমাকে জানান। শুক্রবার রাতে তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আফাজ উদ্দীনের বাড়ি থেকে মাজেদা খাতুনকে আনা হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে চার বছর আগে তিনি তাকে বাসায় নিয়ে যান এবং তখন থেকেই তিনি ওই বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। যথাযথ চিকিৎসা পেলে মাজেদা মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা করি।’

সফিকুল আলম/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।