পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৫ উন্নয়ন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি
* বাজেটের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়
* প্রাপ্যতার অতিরিক্ত ভাতা প্রদান
* প্রাপ্যতা ছাড়া ভাতা প্রদান
* ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ১০০ কোটি টাকার আপত্তি দিয়েছে অডিট বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৫টি প্রকল্পর আর্থিক খরচের ক্ষেত্রে এ আপত্তি জানানো হয়। অডিট শেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
অডিট রিপোর্ট থেকে জানা যায়, প্রকল্পের ১৫টি অডিট আপত্তির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১০টি আপত্তির জবাব দিয়েছে। বাকি পাঁচটি অডিট আপত্তি গ্রহণ করলেও সেগুলোর কোনো জবাব দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বাজেটের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, প্রাপ্যতার অতিরিক্ত ও প্রাপ্যতা ছাড়া ভাতা প্রদান, ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া বিধি বহির্ভূত চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করা, প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত অনিয়মিত ব্যয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর ও ভ্যাট কর্তন না করা, নিম্নমানের বই সরবরাহ প্রভৃতি খাতে শত কোটি টাকার অধিক আর্থিক অনিয়ম হয়েছে মর্মে অডিট রিপোর্টে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাকিলা জামানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি নিরীক্ষক টিম সম্প্রতি এ অডিট সম্পন্ন করেন। তারা ১০০ কোটিরও বেশি টাকার অনিয়ম তুলে ধরে রিপোর্ট দাখিল করেছেন।
আরও পড়ুন: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ জনের চাকরি
আপত্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত অনিয়মিত ব্যয় ৫২ কোটি ২৮ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা, ডিডিপি লঙ্ঘন করে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির পরিবর্তে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আর্থিক ক্ষমতা বহির্ভূত অনিয়মিতভাবে আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ১৫ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার ১৩৩ টাকার কার্যাদেশ, ঠিকাদারের বিল হতে জামানত কর্তনের নামে কর্তনযোগ্য জামানতের অতিরিক্ত অর্থ প্রকল্প হিসাব হতে অনিয়মিতভাবে জামানত হিসেবে ১৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৬ টাকা স্থানান্তর, ঠিকাদার কর্তৃক নিন্মমানের বই সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা ১২ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৭ টাকা, ডিপিপিতে নির্ধারিত কাজ বাস্তবায়ন না করে কম কাজ বাস্তবায়ন করায় ৯ কোটি ১৮ লখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি, সরকারি অর্থে বাস্তবায়িত প্রকল্পের অর্থ বিধি বহির্ভূতভাবে অন্য ব্যাংক হিসাবে ৭ কোটি ৪১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৯ টাকা স্থানান্তর, চুক্তিমূল্যের অতিরিক্ত অর্থ ঠিকাদারকে পরিশোধ করায় ৪১ লাখ ২৬ হাজার টাকা ক্ষতি, ডিডিপি মোতাবেক প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় মূল চুক্তি মূল্যবৃদ্ধি করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করায় ২৮ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি, কোনরূপ আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণ ছাড়াই গাড়ির জ্বালানি সরবরাহকারী ফিলিং স্টেশনকে প্রাপ্যতা বিহীন সুবিধা প্রদানের জন্য ৩৭ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান করা।

এছাড়াও প্রকল্প নিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে অডিট আপত্তি এসেছে। এগুলো হলো- বাজেট বরাদ্দ ছাড়াই প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ব্যয় করায় আর্থিক ক্ষতি ৩১ কোটি ৫৩ লাখ ২৭ হাজার ২৭৮ টাকা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত বিল থেকে নির্ধারিত হারের আয়কর কর্তন না করায় সরকারের ২ কোটি ৪২ লাখ ৩৮৪ টাকার রাজস্ব ক্ষতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিল হতে নির্ধারিত হারে ভ্যাট কর্তন না করা করায় সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৯৭১ টাকা রাজস্ব ক্ষতি, প্রকল্পের জামানত হিসেবে অর্জিত সুদ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করায় সরকারের ১ কোটি ৪০ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৪ টাকা রাজস্ব ক্ষতি, প্রচার ও বিজ্ঞাপন বিল হতে নির্ধারিত হারে সার্ভিস কর্তন না করায় ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯৭ টাকা রাজস্ব ক্ষতি, ঠিকাদারের চুক্তি মূল্যের ওপর বীমা না করায় প্রিমিয়াম এবং প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাটসহ ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫১ হাজার ৭৪৭ টাকার রাজস্ব ক্ষতি।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৫০০ থেকে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। শুরু থেকে এ প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ লোপাটের অভিযোগ ওঠে। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট অধিদপ্তরের রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি ও গাইডলাইন তৈরির পরামর্শ
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। অডিট যা দিয়েছে সব আমার মনে নাই। অডিট আপত্তি যা আসছে সবগুলোর উত্তর আমরা অডিট রিপোর্টে দিয়েছি।’
পাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিষয়টি আমি যোগদানের আগের ঘটনা। আমার সময় কোনো অনিয়ম বা অডিট আপত্তি হয়নি। আপনারা জানেন যারা অডিট করতে আসে তারা সব সময় কিছু না কিছু আপত্তি তুলে ধরে পরামর্শ দেয়। আমরা তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তীতে কাজ করার চেষ্টা করবো।’
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, অডিট আপত্তির বিষয়টি দুদক খতিয়ে দেখবে। কোনো দুর্নীতি পাওয়া গেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমিন ইসলাম জুয়েল/আরএইচ/জেআইএম