দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত কাঙ্গাল হরিনাথের ছাপাখানা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৩

গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১৯০তম জন্মবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। বিশেষ এ দিনটিতে তার ব্যবহৃত এবং দেশের প্রথম ছাপাখানা ‘এম এন প্রেস’ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ছাপাখানাটি ফিতা কেটে ও ঢাকনার কাপড় সরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ।

দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত কাঙ্গাল হরিনাথের ছাপাখানা

জাদুঘরের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ওবাইদুল্লাহর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন কাঙ্গাল হরিনাথের চতুর্থ বংশধরের স্ত্রী শ্রীমতী গীতা মজুমদার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ আল মাছুম মুর্শেদ শান্ত, রানা টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা, সাংবাদিক কে এম আর শাহিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন: খণ্ড খণ্ড আকারে জাদুঘরে গেলো কাঙ্গাল হরিনাথের সেই প্রেস

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৫ জুলাই) কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ঐতিহাসিক এম এন প্রেসটি বাস্তুভিটা থেকে জাতীয় জাদুঘরে হস্তান্তরের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিনামা সই হয়। ২০ লাখ টাকার চেক ও দুজনের চাকরির বিনিময়ে ছাপাখানাটি হস্তান্তর চুক্তিপত্রে সই করেন কাঙ্গাল হরিনাথের চতুর্থ বংশধরের স্ত্রী শ্রীমতি গীতা মজুমদার ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। চুক্তিনামা সম্পাদনের তিনদিন পর ছাপাখানাটি খণ্ড খণ্ড আকারে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) জাদুঘর নিয়ে আসা হয়।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার দেশের গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তিনি ছিলেন একজন প্রজাবান্ধব ও প্রতিবাদী মানুষ। তার ছাপাখানাটি একটি ঐতিহাসিক ও দালিলিক মুদ্রণ যন্ত্র। অনাগত প্রজন্মের কাছে ছাপাখানাটি কুমারখালীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করবে।

দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত কাঙ্গাল হরিনাথের ছাপাখানা

সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার ১৩০৩ (ইংরেজি ১৮৩৩ সাল) বাংলা সনের ৫ শ্রাবণ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কুণ্ডুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: জাদুঘরে যাচ্ছে কাঙ্গাল হরিনাথের ছাপাখানা

গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং তাদের শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে সারাজীবন আন্দোলন করেছেন হরিনাথ। অত্যাচারিত এবং অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় লিখতেন। পরে ১৮৬৩ সালে নিজেই ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।

পত্রিকাটি পরে পাক্ষিক ও শেষে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। এতে সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও কৃষকদের প্রতি তখনকার নীলকর ও জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হতো।

কাঙ্গাল হরিনাথের জীবনে কখনো সচ্ছলতা ছিল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১৮৭৩ সালে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। রাজশাহীর রাণী স্বর্ণকুমারী দেবীর আর্থিক সহায়তায় এটি চালু করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর পত্রিকা প্রকাশের পর আর্থিক এবং সরকারের মুদ্রণ শাসনব্যবস্থার কারণে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন কাঙ্গাল হরিনাথ।

আল-মামুন সাগর/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।