রাতের আঁধারে ঢালাই
স্কুলভবনের লিনটেল ভেঙে মাত্র দুই রড পেলেন এলাকাবাসী
পাবনার ঈশ্বরদীতে মিরকামারী (পশ্চিম) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের জানালার ওপরে লিনটেল ঢালাইয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঢালাই ভেঙে দিয়েছেন এলাকাবাসী।
শনিবার (২৯ জুলাই) রাতে প্রকৌশলী ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য লিনটেল ঢালাই দেন ঠিকাদারের লোকজন। তবে ঢালাইয়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম রড দেওয়া হয়েছে সকালে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিকেলে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে লিনটেল ভেঙে দেখতে পান ছয়টি রডের পরিবর্তে দুটি রড দিয়ে ঢালাই সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী পুরো ঢালাই ভেঙে দিয়ে পুনরায় নিমানুযায়ী ঢালাইয়ের দাবি জানান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুরুর দিকেই নতুন ভবন নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তখন প্রকৌশলীদের বাধার মুখে দ্বিতীয় দফা ফাউন্ডেশন দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ভবন নির্মাণের সময়সীমা গতবছরের ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজে নেই অগ্রগতি। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শিক্ষকদের অফিস কক্ষ না থাকায় পুরোনো ভবনের সিঁড়ি ঘরে চেয়ার-টেবিল পেতে বসতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ের সিঁড়িঘরে চেয়ার-টেবিল পেতে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের কাজকর্ম পরিচালনা করছেন। স্কুলমাঠে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি চার কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল ভবন।
ভবনের ভেতরে গিয়ে যায়, ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য একটি লিনটেল ভেঙে পড়ে আছে। ওপরে ঝুলে আছে দুটি রড।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় নিজের ইচ্ছামতো কাজ করছেন। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ভবন নির্মাণ করছেন। ইটের খোয়া অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রয়োজনের তুলনায় কম সিমেন্ট ব্যবহার করায় পলেস্তারায় মৃদু আঘাত লাগলে ভেঙে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এ স্কুলের ভবন নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে। এখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। পরবর্তী সময়ে ভবনে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের ছেলেমেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
কথা হয় নির্মাণশ্রমিক (রাজমিস্ত্রি) সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা ঢালাই দিয়েছি। তিনি যেভাবে বলেছেন সেভাবে রড দিয়েছি। এতে আমাদের কোনো দোষ নেই।’
মিরকামারী (পশ্চিম) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন (চলতি দায়িত্ব) জাগো নিউজকে বলেন, ভবন নির্মাণকাজে নানা অনিয়ম হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো মাত্রই তিনি এসে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছেন। শনিবার রাতে সবার অগোচরে লিনটেল ঢালাই দিয়েছে। এতে রডের পরিমাণ কম থাকায় তা এলাকাবাসী ভেঙে দিয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম রেজা জাগো নিউজকে বলেন, ভবন নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকাদারকে এ বিষয়ে একাধিকবার বলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারের লোকজন লিনটেল, পিলারসহ অন্যান্য ঢালাই কাজ করেন রাতে অথবা স্কুল ছুটির পর সন্ধ্যায়।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জহরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এখন পর্যন্ত কিছু জানাননি। তবে ওই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের নানা অনিয়মের কথা আমি জানি। অনিয়ম করে কয়েকটি পিলার পলেস্তারা করেছিল। সেটি প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। কাজটি পুনরায় করানো হয়েছে।’
উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, নিয়ম হচ্ছে যেকোনো ঢালাইয়ের সময় আমাদের লোকজন উপস্থিত থাকবে। আমাদের না জানিয়ে ঠিকাদার ঢালাই দিয়েছেন। ঢালাই ভেঙে ফেলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি লোক পাঠিয়েছি। ঠিকাদারকে চিঠিও দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে কোনো কাজ করার সময় উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের লোকজনের উপস্থিতিতে করতে হবে।
সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। চার কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল এ ভবনে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মুকুল হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। মিস্ত্রিরা ছোটখাটো ভুল করলে সেটি পুনরায় ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।
শেখ মহসীন/এসআর/এমএস