ড্রেনের পানিতে কিলবিল করে লার্ভা, ডেঙ্গুঝুঁকিতে বাসিন্দারা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ১০:৫৯ এএম, ২৫ আগস্ট ২০২৩
ড্রেনটিতে জমা পানিতে মশার লার্ভার বংশবিস্তার হচ্ছে অবাধে

সারাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এ অবস্থায় বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাটে জমে থাকা পানি অপসারণসহ জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা শনাক্ত করে তা ধ্বংস করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

অথচ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকালীনও অনেকটাই অরক্ষিত ফেনী শহর। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার খানাখন্দে বা ড্রেনে জমে আছে পুরোনো পানি। সেসব পানিতে মশার লার্ভার বংশবিস্তার হচ্ছে অবাধে। এতে এডিস মশার প্রজনন ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে ডেঙ্গু সংক্রমণের আশঙ্কায় দিন পার করছেন শহরের বাসিন্দারা।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ট্রাংক রোডের থানা পুকুর সংলগ্ন স্থান থেকে সোনালী ব্যাংকের সামনে দিয়ে মিজান রোড পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ড্রেন রয়েছে। কিন্তু সেই ড্রেন দিয়ে বর্ষায়ও পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ড্রেনটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ডাবের খোসা, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক-পলিথিন বা ই-বজ্যে ডেনটি এখন মৃতপ্রায়।

আরও পড়ুন: ফেনীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ, একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ১২ রোগী

এই ড্রেনের পাশ ঘেঁষেই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াত। সেখানে থাকা সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের গ্রাহকরাও এ পথেই যাতায়াত করেন। জেলা পরিষদ, ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল, ফেনী আলিয়া মাদরাসা, শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুল এবং ডায়াবেটিক হাসপাতালে যাতায়াতকারীদের প্রতিদিনের ব্যবহারের সড়ক এটি। অথচ ডেঙ্গুর এই ভয়ঙ্কর সময়ে ড্রেনটিতে যে হারে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে, তাতে আতঙ্কগ্রস্ত সে পথের যাতায়াতকারীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপড়ে সড়কে পানি জমে। সাধারণ পথচারীদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীদেরও নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়।

শহরের আর্য্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী। শহর ঘিরে ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে এসব শিক্ষার্থীরাও রয়েছে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে। তাদের নিয়ে অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায়।

jagonews24

আর্য্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সমর দেবনাথ জানান, এখন চারদিকে ডেঙ্গুর ছড়াছড়ি। এরমধ্যে থানা পুকুরের পাড় ও পার্শ্ববর্তী ড্রেনটিতে ময়লা পানি জমে আছে। সেখানে মশার লার্ভাও কিলবিল করছে। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সুইপার থাকলেও ড্রেনটি কখনো পরিষ্কার করা হয় না।

সোনালী ব্যাংক ফেনী শাখার প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম হারুনুর রশিদ বলেন, ড্রেনের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সব শ্রেণিপেশার মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি একাধিকবার পৌর মেয়রের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু ড্রেনটি সচল বা পরিষ্কার করতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

মিজান রোডে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ফুচকা-চটপটির বেশ কয়েকটি দোকান বসে। অনেকে সন্ধ্যার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে যান। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরে পরিবার নিয়ে একটু সুন্দর সময় কাটানোর মত খুব বেশি জায়গা নেই। তাই তারা এসব ফুচকা-চটপটির দোকানে আসেন। তবে পাশের ড্রেনে যে হারে ময়লা ও পানি জমে আছে, তাতে তারাও আছেন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে। এমনকি এসব দোকানের সামনে এসে বসলে বিকেলেও মশার কামড় হজম করতে হয়। সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বহুগুণ বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন: ফেনীতে ডেঙ্গুতে প্রথম মৃত্যু, বেড়েছে শনাক্তের হার

ফেনী পৌরসভার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কৃষ্ণপদ সাহা জাগো নিউজকে জানান, মিজান রোডের পশ্চিম অংশের ড্রেনটি নির্মাণে ত্রুটি থাকায় অকার্যকর হয়ে পড়ে। বিষয়টি পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী জানার পর প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুরোনো ড্রেন ভেঙে নতুন করে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

ডেঙ্গু বিস্তার রোধে পৌরসভা ব্যাপক কার্যক্রম চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ডভিত্তিক মশক নিধন কার্যক্রম চলমান। প্রতিনিয়ত সব ওয়ার্ডে মশার ওষুধ দিচ্ছি। ঝোপঝাড় পরিষ্কার বা বদ্ধ পানি অপসারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারাও রুটিন মাফিক কাজ করছে।

জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, নির্মাণে ত্রুটি থাকায় ড্রেনটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে। বৃহস্পতিবারও ড্রেনটিতে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। পৌরসভার পরিছন্নতাকর্মীরা ড্রেনে আটকে থাকা ময়লা-আবর্জনা আজকেই পরিষ্কার করবে। তিনি পৌরবাসীকে ড্রেনে ময়লা না ফেলার আহ্বান জানান।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।