রপ্তানি আয় ৫ লাখ ডলার

ইউরোপ-আমেরিকা যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের তোয়ালে

এসকে রাসেল
এসকে রাসেল এসকে রাসেল , জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:০৮ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

একসময় সারাদেশে নাম ছিল কিশোরগঞ্জের তোয়ালের। সেই সোনালি অতীত আঁকড়ে ধরে কিশোরগঞ্জের টেরি তোয়ালের বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এখন ইউরোপ ও আমেরিকায়। মানুরি টেক্সটাইল মিলস নামে একটি প্রতিষ্ঠান মাসে পাঁচ লাখ ডলারের তোয়ালে রপ্তানি করছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা রেখে চলেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক) মানুরি টেক্সটাইল মিলসের তিনটি কারখানা রয়েছে। এখানে প্রথমে তাঁত মেশিনে তোয়ালে বোনা হয়। পরে তা ওয়াশ হয়ে ফাইনাল ফিনিশিংয়ে চলে যায়। সেখান থেকে বায়ারের চাহিদা অনুযায়ী প্যাকেজিং হয়ে চলে যায় বিভিন্ন দেশে। প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ইউনিটে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কাজ করছেন। যাদের বেশিরভাগই স্থানীয় বাসিন্দা। এতে কিশোরগঞ্জের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

Kishoreganj

জানা যায়, এক সময় কিশোরগঞ্জে জেমিনি টেক্সটাইল নামে তোয়ালে উৎপাদনের একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। যার তোয়ালের নাম ছিল সারাদেশে। কিন্তু অনেক দিন আগেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।

মানুরি টেক্সটাইল মিলসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ কে এম মাহফুজুর রহমান বাপ্পী বলেন, আমাদের উৎপাদন এবং ব্যবসা ভালো চলছে। আমার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত তোয়ালে প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব এবং কানাডায় রপ্তানি হয়। এই তোয়ালে হোটেল, হাসপাতাল ও বাড়িতে ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তোয়ালে উৎপাদন করা হয়। প্রতি মাসে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ডলারের তোয়ালে রপ্তানি হয়। প্রথমে আমি আশপাশের প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার লোককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কর্মরত।

Kishoreganj

বাপ্পী বলেন, তিন মাস আগে ১২টি মেশিন বিদেশ থেকে এনেছি। এগুলোতে উৎপাদন কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠান করতে যে জায়গা আমরা বিসিক থেকে পেয়েছি সেই জায়গায় আমাদের হচ্ছে না। বিসিক থেকে আরও জায়গা পেলে প্রতিষ্ঠান বড় করতে পারবো। এতে এই এলাকার নতুন লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। তবে হঠাৎ করে গ্যাস ও সুতার মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কম হচ্ছে। এ কারণে আমাদের পাশের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকার যদি এ বিষয়ে নজর দেয় তাহলে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের অবস্থান আরও সমৃদ্ধ করতে পারব।

তিনি জানান, ২০০৯ সালে ব্যবসা শুরু করেন। কিশোরগঞ্জ ছাড়াও চট্টগ্রামে তার একটি তোয়ালে উৎপাদন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

Kishoreganj

কারখানার কোয়ালিটি শ্রমিক হালিমা খাতুন বলেন, আমি এক বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের তোয়ালের মান নির্ণয়ে কাজ করে আসছি। প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পাই। লাঞ্চের জন্য এক ঘণ্টা টাইম পাই। রেস্ট নিয়ে কাজ করতে পারছি। যে কোনো সমস্যার কথা বললে অফিস থেকে সমাধান করে দেওয়া হয়। কোনো সমস্যায় পড়লে অ্যাডভান্স বেতনও অফিস দেয়।

প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজার জুয়েল মিয়া বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি হওয়ায় আমাদের এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কাজ করে পরিবার নিয়ে চলতে পারছি। মাসের ৫ তারিখের ভেতরে আমাদের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে। যার জন্য আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমি পাঁচ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি।

Kishoreganj

সুয়িং ইনচার্জ কামাল হোসেন বলেন, আমি মানুরি টেক্সটাইল মিলসের সুয়িং ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে আছি। ডাইং থেকে তোয়ালে এখানে এসে লং কাটিং শুরু হয়। পরে এখানে রিভিং হয়ে শর্ট কাটিং হয়। শর্ট কাটিংয়ের পর তোয়ালে সাকসুয়িং হয়। পরে কোয়ালিটি গ্রেডিং করা হয়। সেখান থেকে প্যাকিং হয়ে শিপমেন্টে চলে যায়। সুইং ডিপার্টমেন্টে প্রায় ২০০ শ্রমিক কাজ করেন।

কিশোরগঞ্জ বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রাকিবুর রহমান খান বলেন, এখানে যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। এর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। গ্যাস সরবরাহও ভালো। এছাড়া ভালোমানের নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। কারও বেশি প্লটের প্রয়োজন হলে আবেদন করলে আমরা তা বিবেচনা করবো।

এমআরআর/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।