পুকুর থেকে গ্যাস তুলে কোটি টাকার বাণিজ্য

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৬:২৬ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পুকুর থেকে উঠছে গ্যাস। সেই গ্যাস থেকে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। শুনতে অবাক লাগলেও সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা গ্রামের ৪টি মাছচাষের পুকুর থেকে প্রতিনিয়ত উঠছে গ্যাস। সেই গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মানুষের বাড়ি বাড়ি সংযোগ দিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন পুকুর মালিকরা। গত ১৬ বছরে প্রায় কোটি টাকার গ্যাস তারা এভাবে বিক্রি করেছেন।

২০০৫ সালে নাইকোর গ্যাসকূপ খণনে অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন পরপর দুই দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দেশের গ্যাস সম্পদ ও গ্যাসফিল্ড এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরে বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলাটি বিচারধীন রয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ১৮ বছর পরও এখনো অটোমেটিক গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে টেংরাটিলা নামক ওই গ্রামটিতে।

jagonews24

টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ ১৮ বছর আগে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে দুই দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ফেলে পরিবার নিয়ে অনত্র চলে যান। সেই অগিকাণ্ডে ক্ষতি হয় তার ঘরবাড়ি ও গাছগাছালির। পরে আগুন নিভে যাওয়ার ২ বছর পর অর্থাৎ ২০০৭ সালে নিজ বাড়িতে ফিরলে চিরচেনা সেই বাড়িটি আর চেনার উপায়ে পাননি। নিরুপায় হয়ে বাড়ির পাশে ৩০ শতাংশের একটি পুকুরপাড়ে বসে থাকলে হটাৎ তিনি দেখেন এই পুকুরের নিচ থেকে মাটি ফেটে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস উদগিরণ হচ্ছে। পরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিমেন্টের তৈরি পানির গামলা বানিয়ে সেখানে লোহার পাইপ বসান তিনি। গ্রামীণ পদ্ধতিতে সেই গ্যাস উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী আব্দুল লতিফ।

তিনি জাগো নিউজকে জানান, সবকিছু হারিয়ে আমি যখন নিঃস্ব তখন বাড়ির এই পুকুর থেকে গ্যাস উত্তোলনের পর বিক্রি করে আজ আমি স্বাবলম্বী। দীর্ঘ ১৬ বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকার গ্যাস বিক্রি করেছি।

jagonews24

শুধু আব্দুল লতিফের পুকুর নয়, গ্রামের আরও তিনটি পুকুরের নিচ থেকে মাটি ফেটে গ্যাস বের হচ্ছে। আর সেই গ্যাস সিমেন্ট দিয়ে শতাধিক মাঝারি সাইজের পানির গামলা তৈরি করে মাঝে লোহার পাইপ বসিয়ে গ্যাস উত্তোলন হওয়া জায়গায় ফেলে পরে প্লাস্টিকের পাইপ লাগিয়ে সরাসরি গ্রামের শতাধিক পরিবারের মাঝে তারা বিক্রি করছেন। যারা এই গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন তাদেরকে প্রতিমাসে মাসে ৫০০ টাকা করে পুকুর মালিকদের দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ গত ১৬ বছরে গ্রামের শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে তারা এই গ্যাস বিক্রি করে প্রায় কোটি টাকা আয় করেছেন।

এদিকে গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া এসব গ্যাস লাইনের সংযোগের কারণে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি ওই এলাকা বাসিন্দারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। সেইসঙ্গে পুরো গ্রামে প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালায়।

টেংরাটিলা গ্রামের মানুষ জানান, এই জায়গাগুলো থেকে যদি সরকার গ্যাস উত্তোলন করতো তাহলে সরকার কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারতো।

jagonews24

সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান জাগো নিউজকে, টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর যদি অন্য কোনো স্থান থেকে এখনও গ্যাস ওঠে তাহলে সেখানকার মানুষরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন।

দোয়ারা বাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ মোর্শেদ মিশু জাগো নিউজকে জানান, টেংরাটিলায় যারা গ্যাস উত্তোলন করে বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচলানা করা হয়েছে। এমনকি গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কেউ আবার পাইপ লাগিয়ে গ্যাস উত্তোলন করে বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে অব্যশই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সম্ভবনাময় এই ৪টি পুকুর খনন করলে এখান থেকে কোটি কোটি টাকার গ্যাস ও খনিজ সম্পদ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।