যশোরে রিপন হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল

সন্ধ্যায় জনবহুল সড়কের ফুটপাতে সাত যুবক তাড়া করে আরেক যুবককে মারধর করছেন। দুজনের হাতে ছুরি। তারা এলোপাতাড়ি ছুরি চালিয়ে ওই যুবককে জখম করছেন। যুবক লুটিয়ে পড়ার পর পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। পথচারীরা ছুরিকাঘাত ওই যুবককে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে যশোর শহরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কের রেলগেট এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। সাত যুবক যাকে মারছিলেন তার নাম রিপন হোসেন (৩০)। তার বাড়ি শহরের খড়কি কবরস্থান এলাকায়। তিনি পেশায় একজন লেদমিস্ত্রি। পাশাপাশি তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, রিপনকে যারা হত্যা করেছে তারা এলাকার চিহ্নিত ও এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যশোর পৌরসভার এক কাউন্সিলর, পৌর আওয়ামী লীগ নেতাসহ পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজত নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: যশোরে ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
জানা যায়, চার ভাইবোনের মধ্যে রিপন তৃতীয়। তিনি যশোর রেলস্টেশন এলাকার লেদ কারখানাতে কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঘটনার দিন বিকালে তার স্ত্রী ও আট মাস বয়সী সন্তানকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে বাড়িতে আসেন। এরপর সন্ধ্যায় শহরে বের হন। রাত আটটার দিকে যশোর রেলস্টেশন এলাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন রিপন। শহরের রেলগেট এলাকায় পৌঁছালে প্রতিপক্ষের লোকজন অতর্কিত ছুরিকাঘাত করে তাকে জখম করে। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে কারবালা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে পৌরশহরের খড়কি তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়। বাড়ির ভেতরে চেয়ারে বসে রিপনের মা রূপবান বেগম শোকে মুহ্যমান। প্রতিবেশী ও স্বজনদের জড়িয়ে ধরে তিনি কেঁদেই যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ছেলে অনেক ভালো। আগে রাজনীতি করলেও সন্তান হওয়ার পরে সে আর রাজনীতি করতো না। লেদে কাজ করেই সংসার চালাতো। সোমবার হাসি মুখে ভাত খেয়ে সন্ধ্যায় বাইরে গেল। রাতে শুনলাম আমার ছেলেটা মার্ডার হয়েছে। সে হাসপাতালে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে রিপন এলাকার মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাকের সাথে রিক্সায় চড়ে রেলগেট থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিল। এ সময় সন্ত্রাসীরা দু’টি ইজিবাইকে চড়ে মুজিব সড়কে অবস্থান নেয়। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শাহাজান কবীর শিপলুর ক্যাডাররা এই হামলা হয়। এ সময় হাসিব, নিশান, দিলু, পিচ্চি রাজা, সাকলাইন, সুমন, দিপুসহ আরো কয়েকজন ছিল। সন্ত্রাসী হাসিবের ছুরিকাঘাতে রিপনের মৃত্যু হয়। হামলায় বিপুল ও মুস্তাক আহত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খড়কি এলাকায় রাজনীতি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রায়ই দুপক্ষের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশে লোক নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিজেদের আধিপত্যে বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছিল। আবার সবাইকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।
মিলন রহমান/এসজে/এমএস