চলে গেলেন ভাষা সৈনিক মিয়া আবদুল মতিন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ভাষা সৈনিক মিয়া আবদুল মতিন ভূঁইয়া ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

আবদুল মতিন ভূঁইয়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের টনকি গ্রামের মৃত আবদুল হাশেম ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি একজন ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তবে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছোট মেয়ে মরিয়ম আক্তার সাদিয়া জাগো নিউজকে জানান, বাবার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। বাদ আসর জানাজা শেষে দাফন করা হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার বাবা ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু উনি ভাষা সৈনিকের রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি পাননি। উনার আক্ষেপ ছিল এ স্বীকৃতি না পাওয়ার। শেষ জীবনেও উনি অনেক চেষ্টা করেছেন এ স্বীকৃতি পেতে। তবে গত কয়েক বছর ধরে একুশে ২১ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভাষা সৈনিক হিসেবে বাবাকে সম্মান দেখানো হচ্ছে। অবশেষে তিনি চলে গেলেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে ডেকে ঢাকায় নিয়ে ফুটবলসহ খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম উপহার দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ভাষা সৈনিককে মতিন মিয়া থেকে মিয়া আবদুল মতিন নামে ভূষিত করেন। এরপর থেকেই তিনি মিয়া আবদুল মতিন ভূঁইয়া নামে এলাকায় পরিচিত।

আরও পড়ুন: চলে গেলেন ভাষা সৈনিক আব্দুস সামাদ

স্থানীয় লোকজন ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মতিন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ছয় দফার দাবি আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ১৬-১৭ বছরের যুবক। তখন তিনি উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় উর্দু ভাষা সব ধর্মের ছাত্রদের বাধ্যতামূলক। উর্দু ভাষা শিখতে প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করা হতো। এরপর থেকে উর্দু ভাষার প্রতি ছাত্রদের ঘৃণা জন্মে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন।

১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কিছু রাজনৈতিক কর্মী মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে সবার কাছে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেন। শিক্ষকরাও তাদের এ বিষয়ে উৎসাহ দিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে বলেন। এরপর থেকে শিক্ষকদের উৎসাহে সহপাঠীদের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য বোঝানো শুরু করে মিয়া আবদুল মতিন ভূঁইয়াসহ তার সহপাঠীরা। তখন ২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি সফল করতে আবদুল মতিনসহ স্কুলের আটজন শিক্ষার্থীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলনের মিছিল বের হয়। বিদ্যালয়ের ৮০০ মতো শিক্ষার্থীর এতে অংশ নেয়। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন আবদুল মতিন।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।