ধ্বংসের পথে লক্ষ্মী মন্দির


প্রকাশিত: ০৪:২৭ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৬

নওগাঁর সাপাহারের কোচকুড়লিয়া গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন স্থাপত্য র্কীতির এক অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক লক্ষ্মী মন্দিরটি। মন্দিরটি তদারকি না করায় ও সংস্কারের অভাবে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। স্থানীয়রা মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

মন্দিরটি নির্মাণের সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও জানা গেছে, বৃটিশ শাসনামলে দিনাজপুর জেলার রাজা জগদীশ চন্দ্র রায় বাহাদুর মুর্শিদাবাদের জমিদার শ্রী বিনয় কৃষ্ণের মাতা শ্রীমতি সদয়া লক্ষ্মী দেবীকে তার অংশীদারীত্বের সূত্রে উপজেলার কোচকুড়লিয়া এলাকায় তার জমিদারির ২ আনা সম্পত্তি দান করেন। পরে লক্ষ্মী দেবী ওই সম্পত্তিতে তার জমিদারি পরিচালনার জন্য তার ছেলে বিনয় কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায়কে পাঠান।

বিনয় কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় জমিদারি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোচকুড়লিয়া গ্রামে একটি কাচারি বাড়ি নির্মাণ করেন। পাশাপাশি তার মায়ের আদেশে সেখানে অবস্থিত প্রাচীন আমলের ওই মন্দিরটিকে পুনঃসংস্কার করেন। সংস্কারের পর লক্ষ্মী দেবীকে তুষ্ট করার জন্য প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষ দিনে সেখানে পূজা অর্চনার ব্যবস্থা করেন। পূজা অর্চনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সেই পূজা উপলক্ষে মন্দির চত্বরে এক দিনের এক বিশাল মেলারও আয়োজন করেন।

সে সময়ে লক্ষ্মী দেবী তার পুত্রের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সুষ্ঠুভাবে পূজা অর্চনা ও মেলার স্বার্থে ওই মন্দিরের নামে ২৪ একর সম্পত্তি উইল করে দেন। এরপর ১৯৩৫ সালে দেশ ভাগাভাগি আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে মন্দিরের সেবায়েতগণসহ ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় সকলে প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মন্দিরের নামে উইলকৃত সম্পত্তির নকল দলিল তৈরি ও জবর দখল/অনুমতি দখল মূলে নিজ নিজ নামে রেকর্ড করে ভোগ দখল করে যাচ্ছেন।

পরবর্তীতে ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই আবার দেশে ফিরে এসে মন্দিরটিতে কোন রকমে তাদের পূজা অর্চনা শুরু করেন। আর্থিক সংকট ও হিন্দু সম্পদায়ের দৈন্যতার কারণে বর্তমানে সেখানে আর আগের মতো জাকজমকভাবে কোন পূজা অনুষ্ঠান বা মেলা বসে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরের নামীয় সম্পত্তি পুনঃউদ্ধারে মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত শ্রী মনম্মথ বর্মন মন্দিরের পক্ষে বাদী হয়ে আদালতে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলা দু’টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের দিকে রাতের অন্ধকারে কতিপয় দুর্বৃত্ত মন্দিরটির চুড়ায় অবস্থিত মূল্যবান গম্বুজটি ভেঙে চুরি করে মন্দিরের মূল সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে এবং গোড়ার নিচের মাটি সরে গিয়ে মন্দিরটির গোড়া ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের দিকে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরটি পুনঃসংস্কার করার জন্য তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে আবেদন করে।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গম, চাল মন্দিরের নামে বরাদ্দ হয়। সেই বরাদ্দের চাল গম দিয়ে তারা মন্দিরটির চূড়ায় একটি কৃত্রিম নকল গম্বুজ তৈরি ও গোড়ায় মাটি ভরাট করে সংস্কার করেন। প্রাচীন স্থাপত্য পুরাকৃর্তির নিদর্শন বিশালাকৃতির মন্দিরের উচ্চতা ৬০ ফুট এবং চতুর দিকের ব্যাস ১০ বাই ১৫ ফুট।

সাপাহার উপজেলার গোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, সদর হতে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে কোচকুড়লিয়া গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক লক্ষ্মী মন্দিরটি। মন্দিরের সামনে থাকার একটি দিঘীর নামানুসারে দিঘীটির নাম লক্ষ্মী দিঘী।

এর উত্তর দিকে আরও একটি ছোট মন্দির রয়েছে সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন স্বরস্বতি দেবীর পূজা অর্চনা করেন। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন লক্ষ্মী মন্দিরের নামীয় সকল সম্পত্তি পুনঃউদ্ধার করে আগের মত সেখানে পূজা ও মেলার আয়োজন করে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।

আব্বাস আলী/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।