জলবায়ু পরিবর্তনে পেশা বদলাচ্ছেন চরের বাসিন্দারা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:৩৩ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০২৩

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমুল পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবন জীবিকায়। নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় নিত্যনতুন পেশা বেছে নিচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাবে কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছে চরাঞ্চলের মানুষ।

কখনো অসময়ে নদীভাঙন, বন্যা কিংবা খরা। আবার কখনো আগাম শীতের কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে দিন দিন বিকল্প পেশাকে পুঁজি করছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মো. নুর ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বইয়ের পাতায় ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ পড়ে আসলেও বর্তমানে প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। জলবায়ুর কারণে কাল-পরিক্রমার বদল হয়েছে। কেননা গত কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ বন্যা নেই। শুকনো মৌসুমে হচ্ছে প্রচুর বৃষ্টিপাত। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র-ধরলায় বন্যা মৌসুমেও হচ্ছে নাব্য সংকট। ঝুঁকি এড়াতে কৃষিনির্ভর চরের মানুষজন পেশা বদল করে গবাদি পশুপালনে আগ্রহ বাড়িয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে পেশা বদলাচ্ছেন চরের বাসিন্দারা

আলোর চরের বাসিন্দা নুরনাহার বেগম বলেন, কয়েক বছর আগে চরে হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করতো। এখন চরের অধিকাংশ বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ পালন করছে। এছাড়া অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় গতানুগতিক খামার ছেড়ে ভেড়ার প্রজাতি গারল, উন্নত জাতের ছাগল, বিদেশি গরু পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিকল্প কিছু ভাবা ছাড়া উপায় নেই।

একই এলাকার বাসিন্দা সাইফুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার কারণে চরে এখন কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। অসময়ে বন্যা, খরার কারণে কৃষিতে তেমন ফসল ফলে না। তাই এই চরের মানুষের গবাদি পশুপালনে আগ্রহ বেড়েছে। একটি গরু পালন করে ৬ মাস থেকে এক বছর পর বিক্রি করলে খরচের তুলনায় লাভ কম হয়। কিন্তু একটা ছোট মহিষ ৫০ হাজার দিয়ে কিনে লালন পালন করলে বছর শেষে প্রায় দেড়-পৌনে দু’লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। মহিষের জন্য আলাদা করে ফিড, ভিটামিন,ভুষি, খড় কিনতে হয় না। ফলে স্বল্প ব্যয়ে বেশি লাভ হয় মহিষে। চরের প্রতিটি বাড়ির লোকজন এখন আবহাওয়ার কারণে পেশাও পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে পেশা বদলাচ্ছেন চরের বাসিন্দারা

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোনাক্কা আলী বলেন, কুড়িগ্রামে জলবায়ুর প্রভাবের ফলে চরাঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকায় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। অনাকাঙ্খিত দুযোর্গ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়াতে দিন দিন গবাদি পশু পালনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে মানুষ। জেলার প্রায় ৪৫০টি চরাঞ্চলের জমি গবাদি পশু পালনের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও গারল পালনের সংখ্যাও বেড়েছে। এসব মানুষের দ্বোরগোড়ায় জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ভ্যাকসিনেশন ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ায় তারাও গবাদি পশু পালনে আস্থাশীল হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।

ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।