মাকে হত্যা

২ যুবকের মৃত্যুদণ্ড, প্রেমিকসহ মেয়ের যাবজ্জীবন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০২:৫৩ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০২৩

মানিকগঞ্জে মাহমুদা আক্তার (৪৫) নামে এক গৃহবধূ হত্যায় দুই যুবকের মৃত্যুদণ্ড ও প্রেমিকসহ মেয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ জিন্দাপীর এলাকার আব্দুল বারেকের ছেলে রাকিব হোসেন (২৭) ও নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার পূর্ব গোলমন্ডা এলাকার মাহফুজার রহমান (২৩)।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- নিহত মাহমুদার মেয়ে জুলেখা আক্তার জ্যোতি (২২) ও তার প্রেমিক ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ জিন্দাপীড় এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে শফিউর রহমান নাঈম (২৮)। দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামি নুর বক্সকে খালাস দেন আদালত।

মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাদী মানিকগঞ্জ শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায় জহিরুল ইসলাম। ২০২০ সালে ২২ জানুয়ারি সকালে তিনি বাজার করে বাড়ি এসে দেখেন তার মেয়ে জুলেখা আক্তার জ্যোতি চুপ করে বসে আছেন। মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করায় জ্যোতি এলোমেলো কথাবার্তা বলেন। এরপর রুমে গিয়ে স্ত্রী মাহমুদার মরদেহ লেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। এ ঘটনায় তিনি তার মেয়েসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

২০২০ সালের ৩১ মে মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম আল মামুন সংশ্লিষ্ট আদালতে হত্যা মামলায় জড়িত থাকার দায়ে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। মামলায় মোট ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জন সাক্ষ্য দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তে উল্লেখ করেন, জুলেখা আক্তার জ্যোতি একটু জেদী ও বেপরোয়া হওয়ায় ঢাকার ধামরাই উপজেলার গোলাকান্দা গ্রামের মারুফের সঙ্গে পরিবার বিয়ে দেন। বিয়ের দুবছর পর ঢাকার কেরানীগঞ্জের নাঈমের সঙ্গে ফেসবুকে তার প্রেম হয় এবং এক পর্যায়ে তারা শারীরিক সর্ম্পকে জড়িয়ে যান।

২০১৯ সালের নভেম্বরে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে জ্যোতি মানিকগঞ্জে বাবাবাড়ি চলে আসেন। এরপর নাঈম মাঝে মধ্যে জ্যোতির সঙ্গে ওই বাড়িতে অবৈধ মেলামেশা করলে তার মা বিষয়টি বুঝতে পারেন। জ্যোতিকে শাসন করেন এবং অন্য জায়গায় বিয়ের আয়োজন করেন।
জ্যোতি নাঈমের সহায়তা নিয়ে তার মাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। প্রেমিক নাঈম দেড় লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে মাহমুদা আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

ঘটনার আগেরদিন বিকেলে জ্যোতির কক্ষে গিয়ে অবস্থান নেন নাঈমসহ মোট চারজন এবং সারারাত একই কক্ষে জ্যোতিসহ সবাই অবস্থান নেন। ঘটনার দিন সকালে জ্যোতির বাবা হাটতে ও বাজার করতে গেলে সবাই জ্যোতির মায়ের রুমে গিয়ে দেখে তিনি সেলাই মেশিনে কাজ করছেন। জ্যোতির সঙ্গে অপরিচিত লোকদের দেখে তিনি চিৎকারের চেষ্টা করলে জ্যোতি দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় জড়িতদের আদালত মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ায় পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

মামলার বাদী জহিরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীর হত্যার পরিকল্পনাকারী মেয়ে জ্যোতি ও তার প্রেমিক নাঈম। এদের যাবজ্জীবন হতে পারে না, এদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল। তাদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তির জন্য উচ্চ আদালতে যাবো।

তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার অভিমত ব্যক্ত করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বাদশা।

বি.এম খোরশেদ/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।