বাজারে আসছে হাওরের মাছ, দাম চড়া

রাজীবুল হাসান রাজীবুল হাসান ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মৎস্য আড়তে মৌসুমের শুরুতেই হাওর এলাকা থেকে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ আসছে। এখানকার মাছ বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হচ্ছে। তবে দাম কিছুটা চড়া। । নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছের দামও।

বর্ষাকালের শেষে কার্তিক মাসের শুরুর দিকে অগ্রহায়ণ, পৌষ মাসে হাওর অঞ্চলসহ বিভিন্ন নদনদী, খাল বিলে পানি কমে যাওয়ায় এ সময়টাকে মাছ আহরণের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সিলেট, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, খালিয়াজুড়িসহ বিভিন্ন হাওর অঞ্চলে মাছ ধরার বেশ ব্যস্ততা থাকে। সেসব এলাকার খাল বিল, নদী থেকে দেশীয় মাছ ধরার মৌসুম চলে। এসব মাছ বিক্রি করতে নদী ও সড়ক পথে প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু করে মাঝরাত অবধি নৌকা ও গাড়িযোগে ভৈরবের পুলতাকান্দা নৈশ্যকালীন মৎস্য আড়তে আসনে বিক্রেতারা। সেসব মাছ বিক্রি চলে মাঝ রাত পর্যন্ত।

রোববার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভৈরবের পুলতাকান্দা মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা যায়, হাওর অঞ্চলের মিঠাপানির নানা প্রজাতির দেশীয় মাছের আমদানি বেড়েছে। ভৈরবের দুশ-এর বেশি মৎস্য আড়গুলোতে বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই হাওর অঞ্চল থেকে নৌকা ও ট্রাকে কয়েকশ ড্রামভর্তি মাছ বিক্রির জন্য আসছেন। আড়তে আসা মাত্রই লোকজন মাছের প্রক্রিয়া শেষে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখছেন।

মাছ কিনতে স্থানীয় ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা ভিড় করছেন আড়তর মিঠাপানির দেশীয় প্রজাতির রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাইম, বেলে, সরপুঁটি, টেংরা মাছ সহ ছোট বড় বাহারি মাছ বিক্রির জন্য ঢালায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে আড়তে পুকুরের চাষকৃত রুই, কাতলা, টেংরা, চিংড়ি, শিং,কই মাছেরও বেশ আমদানি রয়েছে। তবে স্থানীয় ক্রেতারা বলছেন সবকিছুর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের দামও খুব বেড়েছে।

ভৈরবের মৎস্য আড়তে বড় আইড় মাছ প্রতি কেজি ৬-৭০০ টাকা, ছোট আইড় ৫-৬০০, বোয়াল ৭-৮০০, রুই ৪-৫০০, কাতল ৩-৪০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১১০০, বাইম ১১-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছোট ছোট অনেক অনেক ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে আড়তে। যা ২০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ক্রেতারা।

হবিগঞ্জ জেলার লাখাই এলাকার মাছ বিক্রেতা রহমতউল্লাহ বলেন, হাওর এলাকার মাছ ধরা মাত্র শুরু হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিনই আমাদের এলাকা থেকে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ জেলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ভৈরবের মৎস্য আড়তে বিক্রির জন্য এনেছি। এ বছর অন্যবারের চেয়ে মাছ কম ধরা পড়ছে।

ইটনা এলাকার হাওর থেকে বোয়াল, আইড়, চিংড়ি , টেংরাসহ নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে বিক্রির জন্য আড়তে আসেন মাহফুজ মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের এলাকা থেকে নৌকাযোগে ভৈরবের আড়তে মাছ বিক্রি করতে আসি। সবসময় এই আড়তে মাছ বিক্রি করি। তবে এখন থেকে মাছ ধরার মৌসুম শুরু হয়েছে। আগামী ১-২ দুই মাস পুরোদমে হাওর এলাকা থেকে মাছ আসবে। তবে সড়কে হরতাল অবরোধের কারণে বাজারে ক্রেতা ও পাইকারদের আগমন কম।

ভৈরবের আলিফ এন্টারপ্রাইজের মৎস্য ব্যবসায়ী বাবু মিয়া বলেন, কার্তিক মাসের শুরু থেকে হাওরে নদী ও খালবিলের পানি কমতে থাকে। সে সময়ে প্রচুর দেশীয় মাছ ধরা পড়ে। সেসব মাছ জেলে ও পাইকাররা বিক্রির জন্য নৌকাযোগে আমাদের আড়তে নিয়ে আসেন। এ বছর হাওরে মাছ আসা শুরু হয়েছে। আরও কয়েক মাস দেশীয় প্রজাতির মাছের আমদানি হবে।

ভৈরবের সেভেন স্টার মৎস্য আড়তের মালিক আমির হোসেন বলেন, কয়েকদিন হলো হাওরের মাছ আড়তে আসতে শুরু হয়েছে। তবে এ সময়ে হাওর থেকে আগে বিপুল পরিমাণ মাছ আসতো। কিন্তু এখন তো আর সেই মাছ চোখে পড়ে না। দিন যাচ্ছে আর মাছের আমদানি কমছে। তবে আশা করছি কয়েক মাস হাওর থেকে মাছের আমদানি বাড়বে। দেশে তো সবকিছুরই দাম বেড়েছে। ফলে মাছের দামও বেড়েছে।

পরিবারের জন্য মাছ কিনতে মৎস্য আড়তে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা নোয়েল আহমেদ। তিনি বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে মাছের দামও বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় আমাদের আয় বাড়েনি। আগে এক কেজি ওজনের দেশীয় একটি বোয়াল মাছের দাম পড়তো ৩-৪০০ টাকা এখন সেই বোয়াল ৬-৭০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে স্বল্প পরিমাণের আয় দিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।