বুড়িমা না থাকলেও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তার মিষ্টান্ন ভান্ডার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৫:৩৩ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৩

পঁচাত্তর বছর আগে জামালপুরে সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের রমরমা ব্যবসা। স্বামী সারাদিন পাটের মোকামে পড়ে থাকতেন। একঘেয়েমি কাটাতে অমলাবালা সাহা এক বান্ধবীর কাছে দই-চিড়া ও মিষ্টি বানানো শেখেন। এরপর শহরে একটি দোকান খোলেন। পাট নিয়ে ব্যস্ত শহরে দ্রুতই ক্রেতা পেয়ে যান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

সেই দোকানের নাম এখন মা মিষ্টান্ন ভান্ডার বুড়িমা দোকান। তবে বুড়িমা না থাকলেও এখনো তার গড়ে তোলা দোকানে চলেছে হরেক রকম মিষ্টি বেচাকেনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবন জীবিকার তাগিদে বিয়ের পর অমলাবালা সাহা মানিকগঞ্জের বালিয়াটি থেকে স্বামীর সঙ্গে জামালপুরে এসেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মিষ্টির দোকানেই সব শ্রম ও সময় ব্যয় করেন তিনি। তার ব্যবসার মূলমন্ত্র ছিল সততা আর ব্যবহার। বুড়ি মা নিজেই মিষ্টি বানাতেন, ক্রেতা সামলাতেন এবং ব্যবসার হিসাবও রাখতেন।

২০০৪ সালে বুড়ি মা মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে থাকে। তবে জেলা শহরে এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে দোকানটি।

স্থানীয়রা জানান, একসময় জমজমাট ছিল এ মিষ্টির দোকান। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতাদের সমাগম ঘটতো এখানে। কিন্তু বুড়িমা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যায় দোকানের ঐতিহ্য। একপর্যায়ে এর হাল ধরেন তার উত্তরসূরিরা। শহরের একাধিক জায়গায় এর শাখা খোলা হলেও সেই স্বাদ আর গন্ধ নেই। হারিয়ে যেতে বসেছে এর ঐতিহ্য।

বুড়িমা’র দোকান থেকে মিষ্টি কেনার সময় মুজাহিদ বাবু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি বলেন, বুড়িমা’র মিষ্টির দোকান এ জেলার এক ইতিহাসের নাম। দোকানের নাম সবারই সুপরিচিত। তবে এ দোকানের স্বাদ আর গন্ধ আগের মতো নেই। বুড়িমা মারা যাওয়ার পর থেকেই এর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। তবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো আগের ঐতিহ্যে ফিরবে।

তবে অমলাবালা সাহার ছেলের ঘরের নাতি মা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী সুমন সাহার দাবি, অমলাবালা সাহা মারা যাওয়ার পর তার স্মরণে এ মিষ্টান্ন ভান্ডার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মারা গেলেও এখনো তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন উত্তরসূরিরা।

জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই আল হাদী জাগো নিউজকে বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মিষ্টির ব্যবসার সঙ্গে বেশি জড়িত। মুসলমানরা মিষ্টির ব্যবসায় পরে এসেছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর যখন বুড়িমা’র দোকানটা প্রতিষ্ঠিত হলো তখন নারী হওয়ায় দ্রুতই জেলায় পরিচিতি লাভ করেন তিনি। এছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের সেবা, আদর আপ্যায়ন পুরুষদের তুলনায় নারীরা কয়েকগুণ বেশি করতে পারতেন। বুড়িমা’র দোকানে যেসব ক্রেতা আসতেন তাদের তিনি আত্মীয়র মতো সেবা করতেন। গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষ বুড়িমা’র ব্যবহারে খুবই অনুপ্রাণিত হতেন। ক্রেতারা আদর আপ্যায়নের সঙ্গে দই-চিড়া খাচ্ছে। এভাবেই বুড়িমা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদাভাবে পরিচিতি পায়। বুড়িমা’র দোকানটা শুধু জামালপুর নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলায়ও সমানভাবে পরিচিতি পেয়েছিল। বাংলা সিনেমার গানেও বুড়িমা’র মিষ্টির দোকানের কথা আছে।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, কিন্তু বুড়িমা মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকার সূত্রে ওই দোকানটি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেলেও মূল দোকানটা নতুন শিল্পকলা একাডেমির সামনে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এটার পরিসর ছোট হলেও এর সুনামটা অন্য দোকানের চেয়ে একটু বেশি।

মো. নাসিম উদ্দিন/এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।