জলাবদ্ধ ৪০ হেক্টর ফসলি জমি

‘ঋণ নিয়ে আবাদ করেছি, এখন পথে বসার অবস্থা’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁদপুর
প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষকরা। ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র পরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হেক্টর জমির ফসল। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঋণ নিয়ে আবাদ করা কৃষকরা।

উপজেলার কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের মাড়কি উত্তর পাড়া, পশ্চিম পাড়া, পৌর এলাকার বলাখাল গ্রাম ও সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতকালীন আগাম সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসলের জমিতে পানি জমে আছে। এতে পচে যাচ্ছে চাষ করা ফসল। অনেকে তাদের জমির ফসল রক্ষায় সেচের মাধ্যমে পানি অপসারণ করছেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

আরও পড়ুন: ‘ধারদেনায় চাষ করেছি, বৃষ্টিতে স্বপ্ন মাটিতে মিশে গেছে’

উপজেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যে মতে, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া ও লাউ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৫ হেক্টর জমি। এছাড়াও ১৫ হেক্টর জমির সরিষা, আলু, মরচি, খিরা, শসা, টমেটো, ফুলকপি, রসুন ও পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপজেলা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা।

‘ঋণ নিয়ে আবাদ করেছি, এখন পথে বসার অবস্থা’

মাড়কী উত্তর পাড়ার কৃষক আবুল বাশার বলেন, এ বছর তিন একর জমিতে আগাম শীতকালীন শাক সবজির আবাদ করেছি। জলাবদ্ধতায় আমার সব ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন সমিতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করেছি। এখন পথে বসার অবস্থা। ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর চিন্তায় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন আমার বাবা আব্দুল হালিম।

আরও পড়ুন: ফেনীতে দুর্যোগ কবলিত ২৮২ হেক্টর জমির আমন, বন্ধ বিদ্যুৎ সরবরাহ

ওই এলাকার কৃষক মোস্তফার সরিষা, কবির মিয়াজী, মো. জসিম গাজী ও রফিক দত্ত জানান, তাদের মতন মাড়কী উত্তর ও পশ্চিম পাড়ার প্রায় দুই শতাধিক কৃষকের রবি শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

‘ঋণ নিয়ে আবাদ করেছি, এখন পথে বসার অবস্থা’

মাড়কী পশ্চিম পাড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ মিয়াজী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের এলাকার কৃষক খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যারা পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ করে রেখেছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এলাকার তিন ফসলি জমিগুলো আর আবাদ হবে না। বছরের অধিকাংশ সময় পতিত পড়ে থাকবে।

বলাখলাল গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন বলেন, ৫ একর জমিতে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, খিরা ও শসা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো ফসলে পচন ধরেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার আর কীভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

আরও পড়ুন: ‘মিধিলি’র তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন বিদ্যালয়, খোলা আকাশের নিচে পাঠদান

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, সরকারি খাল ভরাট বা মাছ চাষ করে জলাবদ্ধতা তৈরি করে বাড়ী ঘর নির্মাণ করার কোনো বিধান নেই। এরই মধ্যে কিছু বাধ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে কৃষি বিভাগ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ব্যবস্থা নিব। তবে এক্ষেত্রে জন সচেতনতা তৈরি করা বেশি জরুরি। আর বাধ দেওয়া বা বাড়ি তৈরি করার আগে অভিযোগ দিতে হবে। বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে অভিযোগ দেওয়াটা কতটা যৌক্তিক। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমরা প্রণোদনার আওতায় আনবো।

শরীফুল ইসলাম/জেএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।