প্রভাবশালীর দাপট
প্রবাসীর মার্কেট এখন ‘জঙ্গলবাড়ি’, ভাইয়ের বিরুদ্ধে ১৪ মামলা
দুই যুগের বেশি সময় ধরে সৌদি আরবে আছেন বিল্লাল হোসাইন। প্রবাসে থেকে নিজের কষ্টার্জিত অর্থে নিজ গ্রামে জমি কেনেন। ওই জমিতে টিনের ১৮টি কক্ষ তুলে চালু করতে চেয়েছিলেন মার্কেট। কিন্তু চালুর আগে সেই মার্কেটের যাওয়ার রাস্তায় দেওয়াল তুলে দেন গ্রামের প্রভাবশালীরা। ফলে চালু হয়নি প্রবাসীর সেই মার্কেট। সেখানে প্রবেশের রাস্তা না থাকায় গত তিন বছরে মার্কেট পরিণত হয়েছে জঙ্গলে।
ওই সম্পদ দেখভাল করতে গিয়ে একে একে ১৪টি মামলার আসামি হয়েছেন প্রবাসীর বড় ভাই। এরমধ্যে ১২টি মামলায় পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। এসব ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে অবশেষে বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

প্রবাসী বিল্লাল হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের বড়নগর গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে। তিনি প্রবাসে থাকায় গত ২১ নভেম্বর ওসি ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার বড় ভাই মনছুর আলী।
লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, মনছুর আলীর ছোট ভাই বিল্লাল হোসেন দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থেকে তার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে চাতলপাড় বাজারে ১৩ শতক জমি কেনেন। পরে সেখানে ১৮টি দোকান করে মার্কেট দেন। বিল্লাল প্রবাসে থাকায় ওই মার্কেট দেখাশোনা করতেন তার বড় ভাই মনছুর আলী। তবে স্থানীয় হাবিব গংরা রাতের আঁধারে মার্কেটে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে পাকা দেওয়াল নির্মাণ করেন। মনছুর আলী এর প্রতিবাদ করায় তার বিরুদ্দে ১৪টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। এরমধ্যে একটি মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি।

মামলার হাজিরার জন্য বছরের বেশিরভাগ সময় আদালত চত্বরে কাটে মনছুর আলীর। ১৪টি মামলার মধ্যে ১২টিতেই পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি দুটি মামলার তদন্ত চলছে।
মনছুর আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাকে সাজানো মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে মার্কেটে যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ করে দিছে পাশের মার্কেটের মালিক হাবিব গংরা। মার্কেটে ঢোকার রাস্তা না থাকায় মার্কেটটি এখন জঙ্গলবাড়িতে পরিণত হয়েছে। হাবিব গংদের সাজানোর মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। এ বৃদ্ধ বয়সে থাকতে হয় বাড়ি ছাড়া। আমি এর বিচার চাই।’
প্রবাসী বিল্লাল হোসাইন মোবাইলে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রবাসে থাকি। আমার সম্পত্তি বড় ভাই দেখেন। তারা আমার জায়গা দখল করতে দেওয়াল দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যা ১৪টি মামলা দিয়েছে। কিন্তু এর একটিও রাস্তা সংক্রান্ত নয়। পুলিশের তদন্তে ১২টি মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’
চাতলপাড় ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিল্লাল মিয়ার মার্কেটে যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ। বিষয়টি নিয়ে আমি সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু করা যায়নি।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের জায়গায় আমরা আছি। রাস্তায় কীভাবে দেওয়াল হইছে জানি না। আমরা কোনো মামলা দিইনি।’
এ বিষয়ে নাসিরনগর থানার ওসি সোহাগ রানা বলেন, আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নাসিরনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/জিকেএস