৩৬ বছর কারাভোগ করা মঞ্জুরকে সমাজে ফেরাতে পাশে দাঁড়ালেন ডিসি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

হত্যা মামলার আসামি মঞ্জুর আলম (৬০)। টানা ৩৬ বছর ২ মাস সাজাভোগ করেন তিনি। সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে বাইরের দুনিয়াটা তার কাছে যেন বিষাদের মতো। পরিবার পরিজনকে কাছে পেলেও হতাশা কাটেনি তার। এমন অসহায়ত্ব ও একাকিত্বের খবরে মঞ্জুর আলমের পাশে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ ডিসেম্বর রংপুর পৌরসভার হাবীবনগর এলাকার মৃত. মহির উদ্দিনের ছেলে মঞ্জুর আলম দীর্ঘ ৩৬ বছর কারাবাসের পর কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পান। ১৯৯৭ সালে আদালতের রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর বাইরে বের হয়ে কী করবেন সেই বিষয়ে হতাশ ছিলেন মঞ্জুর আলম। বাড়িতে গিয়ে অভাবের সংসারে কোনো আনন্দই পাননি তিনি। এত বছর পর স্ত্রী-সন্তানদের দেখেও তার মনে কোনো উচ্ছ্বাস জাগেনি। একটা ঘোরের মধ্যেই যেন বিচরণ করছেন তিনি।

মঞ্জুর আলমের যখন ৩৪ বছর বয়স, তখন দুই ছেলে আর স্ত্রীকে রেখে কারাগারের জীবন শুরু হয় তার। এরপর পৃথিবীর জমকালো আলো-বাতাস ছেড়ে তাকে কারাবাসে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। একসময় সেই জীবনটাকেই মেনে নিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তার বয়স ৬০ বছর। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে এসে চমকে যান মঞ্জুর আলম। সবকিছুই পাল্টে গেছে। থমকে আছে শুধু তার স্মৃতিময় ৩৬টি বছর।

মঞ্জুর আলম বলেন, ‘জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে বের হয়ে প্রথমে আতংক অনুভব করি। বাইরে এত লোকসমাগম, বাড়িঘর, যানবাহন দেখে চমকে উঠেছি। যখন জেলখানায় ঢুকি তখন রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে একটা গাড়ি আরেকটা গাড়িকে পাশ কাটাতে পারতো না। এখন দেখি বিশাল রাস্তা হয়েছে। হয়েছে বিশাল বিশাল ভবন। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে।’

মঞ্জুর আলমের এমন অসহায়ত্বের কথা জেনে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য পাশে দাঁড়ান। তিনি কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মঞ্জুর আলম জেলখানায় দীর্ঘ সময় ধরে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতেন। তার বড় ছেলে সুরুজ আলম রংপুর ট্রাক স্ট্যান্ডে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। ছেলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিতে জেলা প্রশাসক সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে মঞ্জুর আলমকে ৪০ হাজার ৭৬০ টাকার উপকরণ কিনে দেন। যার মধ্যে রয়েছে ড্রিল মেশিন, ওয়েল্ডিং মেশিন, রিং-ডাল সেট, মেশিনসহ অন্যান্য উপকরণ।

কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার আবু সায়েম জানান, মঞ্জুর আলম খুব সাদাসিদেভাবে থাকতেন। তিনি রান্নাবান্না, হস্তশিল্পের কাজ, ইলেকট্রিসিটি ও প্লাম্বারের কাজ জানতেন। তাকে বিভিন্ন কাজে পাওয়া যেতো। রংপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলে অবস্থান করার পর শেষ সময়টিতে তিনি কুড়িগ্রাম কারাগারে কাটিয়েছেন।

সদ্য কুড়িগ্রাম কারাগারে যোগদান করা জেল সুপার সফিকুল আলম জানান, মঞ্জুর আলম সাজাভোগের পর মুক্তি পেয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন, বাইরের দুনিয়ায় গিয়ে কী কাজ করবেন। তার মতো অসহায় লোকের পাশে জেলা প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়ানোয় আমরা খুবই খুশি হয়েছি।

মঞ্জুর আলমের ছেলে সুরুজ আলম মোবাইলে জানান, বাবাকে পেয়ে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। বাবার মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। বেশিরভাগ সময় তিনি আনমনা হয়ে থাকেন। তার স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। আমরা দু’ভাই বাবাকে দেখেশুনে রাখছি।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, দীর্ঘ কারাভোগের পর মঞ্জুরুল আলম কিছুটা অন্তর্মুখী হয়ে আছেন। পরিবারে তার ছোট ছেলে অনার্সে পড়াশুনা করছে। বড় ছেলের আয়ে কোনোভাবে তাদের সংসার চলছে। তার পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জেনে আমরা চেয়েছি তিনি কাজের মধ্যে থেকে সংসারে উপার্জনের মাধ্যমে কর্মমুখী থাকুন। সেই চিন্তা থেকে জেলা প্রশাসন থেকে তাকে ৪০ হাজার টাকার উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আশা করছি এতে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।