সম্পত্তি লিখে দিতে নির্যাতন, প্রাণে বাঁচতে চান বৃদ্ধ বাবা
‘আমি ৮৫ বছরের একজন বৃদ্ধ মানুষ। এ বয়সে ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, কিডনিজনিত বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত। আমি তেমন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারি না। এ অবস্থায় আমার সম্পত্তি লিখে নেওয়ার জন্য ছেলেরা উঠেপড়ে লেগেছে। আমাকে মারধর করেছে। প্রতিনিয়ত আমাকে নির্যাতন-নিপীড়ন করে যাচ্ছে। যেকোনো সময় আমাকে হত্যাও করতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকার মো. সাইজ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে বয়সের ভারে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না সাইজ উদ্দিন।
সাইজ উদ্দিন প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রীর ছয় মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে রয়েছে এক ছেলেসন্তান। বর্তমানে তিনি তার তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন।
এ অবস্থায় বৃদ্ধ বাবার জীবদ্দশাতেই সম্পত্তি লিখে নেওয়ার জন্য প্রথম স্ত্রীর ঘরের ছেলেমেয়েরা চাপ প্রয়োগ করছেন। বাবার নামে মামলা করেছেন। বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। এমনকী মারধর করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচতে ছেলের বিরুদ্ধে সংবাদ করেছেন বাবা সাইজ উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে সাইজ উদ্দিনের পক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার বলেন, রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন সাইজ উদ্দিন। বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মিল-ফ্যাক্টরি প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু সে সময়ে লাভের পরিবর্তে লোকসানে জর্জরিত হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। যে কারণে তাদের পৃথক করে দিয়ে মাসিক টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্রথম স্ত্রীর ঘরের সন্তানরা সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য জোরালো চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এতে সাইজ উদ্দিন রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন মামলা দিয়ে টেক্সটাইল মিলের মেশিন বিক্রি করে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। সেইসঙ্গে স্বামী সাইজ উদ্দিনসহ তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। একটি বাড়িতে সবাইকে আটকে রাখেন। পরে ৯৯৯ ফোন করে সাহায্য পাওয়ার পর তৎকালীন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের উদ্ধার করেন।
‘কিছুদিন আগে স্থানীয় কাউন্সিলর অফিসের মাধ্যমে রিপন ভাওয়াল নামের একজন শহরের কলেজ রোড এলাকার একটি অফিসে ডেকে সম্পত্তি লিখে দিতে বলে। সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলমান থাকার কারণে সাইজ উদ্দিন সম্পত্তি লিখে দিতে না চাইলে ছেলেরা মিলে খারাপ ব্যবহার এবং মারধর করে। তারা যেকোনো সময় আমাদের হত্যা করতে পারে। আমি আমার স্বামীসহ নিরাপদভাবে বাঁচতে চাই’, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন গুলনাহার আক্তার।
সাইজ উদ্দিনের বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা তিন বিয়ে করেছেন। তিনি তার তৃতীয় স্ত্রী ও সন্তানের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কেনো সম্পত্তি দিতে চাচ্ছেন না। ছেলে হিসেবে বাবার সম্পদ পাওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে। তিনি এরইমধ্যে আমার দাদার ১০৩ কোটি টাকার সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন। আমাদের কোনো সম্পত্তি দেননি।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান দিপু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে যেটা বুঝেছি সেটা হলো সাইজ উদ্দিনের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। আর এ সম্পত্তি দখলে নেওয়ার জন্য তার প্রথম স্ত্রীর ছেলেমেয়েরাসহ অনেকেরই নজর পড়েছে। যে কারণে এলাকাবাসীসহ সবাই তার প্রথম স্ত্রীর ছেলেমেয়েদের সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। বর্তমানে সাইজ উদ্দিনকে বাড়িছাড়া করে দিয়েছেন তারা ছেলেমেয়েরা। তিনি তার বাড়ি ছেড়ে সিদ্ধিরগঞ্জে বসবাস করছেন। এ নিয়ে আদালতে কয়েকটি মামলা চলমান।’
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/এএসএম