সুবর্ণচরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

‘মাস্টার মাইন্ড’ রুহুল আমিন, অবশেষে মৃত্যুদণ্ড

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ০৮:৫১ এএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার এজাহারে আসামি ছিলেন না সাবেক ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমিন। পরে মামলাটি তদন্ত করে মো. রুহুল আমিনসহ ১৬ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঘোষিত রায়ে তাকে এ ঘটনার মাস্টার মাইন্ড উল্লেখ করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিনগত রাতে চরবাগ্গ্যা গ্রামের ৪০ বছরের ওই গৃহবধূর বাড়িতে হানা দেয় সন্ত্রাসীরা। পরে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। তাদের মারধরে আহত হন গৃহবধূসহ তার স্বামী ও সন্তানরা। এ ঘটনায় পরদিন ৩১ ডিসেম্বর চরজব্বর থানায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে নয়জনকে আসামি করে মামলা (নম্বর-১২) করেন।

ওই মামলায় আসামি করা হয়, মো. সোহেল (৩৫), হানিফ (৩০), স্বপন (৩৫), চৌধুরী (২৫), বেচু (২৫), বাসু প্রকাশ কড়াইল্যা বাসু (৪০), আবুল (৪০), মোশারফ (৩৫) ও সালাউদ্দিনকে (৩৫)।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ ১৬ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- মো. সোহেল (৩৫), হানিফ (৩০), স্বপন (৩৫), চৌধুরী (২৫), ইব্রাহিম খলিল বেচু (২৫), মো. বাদশা আলম বাসু প্রকাশ কড়াইল্যা বাসু (৪০), আবুল হোসেন আবু (৪০), মোশারফ (৩৫), সালাউদ্দিন (৩৫), মো. রুহুল আমিন (৪০), মো. জসিম উদ্দিন (৩২), মো. হাসান আলী বুলু (৪৪), মো. মুরাদ (২৮), মো. জামাল প্রকাশ হেঞ্জু মাঝি (২৮), মিন্টু প্রকাশ হেলাল (৫৫) ও মো. সোহেল (২৮)। এরমধ্যে ১৫ আসামিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ঘটনার পর থেকে আসামি মিন্টু প্রকাশ হেলাল পলাতক রয়েছেন।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, রুহুল আমিন নিজে সাফাই সাক্ষী দিয়ে দাবি করেন, ভুক্তোভোগী নারী তার ভাগনী হন। রুহুল আমিন ২০১৮ সালের ২০ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে ২১ জুন থকে ৫ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন তিনি আহতাবস্থায় অন্যের সাহায্যে চলাফেরা করতেন।

তবে আদালত এও বলেন, আসামি রুহুল আমিনের এমন বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি। মামলার আট আসামির ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে রুহুল আমিনের নির্দেশে দলবদ্ধ ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণিত হয়।

পরে মামলার ১৬ আসামির মধ্যে রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া বাকি ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই রায়ে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

মৃতুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওই এলাকার মৃত খুরশিদ আলমের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন (৪০), মৃত আব্দুল হাশেমের ছেলে হাসান আলী বুলু (৪৪), মৃত ইসমাঈলের ছেলে মো. সোহেল (৩৫), মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে স্বপন (৩৫), আবুল কাশেমের ছেলে ইব্রাহিম খলিল বেচু (২৫), মৃত ছিড়ু মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন আবু (৪০), ফকির আহম্মদের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (৩৫), মোতাহের হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২), মো. রফিকের ছেলে মো. মুরাদ (২৮) ও মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে জামাল প্রকাশ হেঞ্জু মাঝি (২৮)।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ইসমাইল প্রকাশ বাগন আলীর ছেলে মো. হানিফ (৩০), আবদুল হামিদের ছেলে মো. চৌধুরী (২৫), মৃত আহম্মদ উল্লাহর ছেলে বাদশা আলম বাসু প্রকাশ কুড়াইল্যা বাসু (৪০), তোফায়েল আহম্মদ তোফার ছেলে মোশারফ (৩৫), আবুল কালামের ছেলে মো. সোহেল (২৮) ও পলাতক মৃত আরব আলী গর্দানের ছেলে মিন্টু প্রকাশ হেলাল (৫৫)।

ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।