সিরাজগঞ্জে ৩০০ বছরে দইমেলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সিরাজগঞ্জ শহর ও চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় সারি ধরে শতশত দইয়ের ভাঁড়। সেগুলো নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। রয়েছে বিভিন্ন রকমের দই ক্ষীরসা দই, রাজাপুরের দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই ও শ্রীপুরী দই।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল হতে জেলা শহরের মুজিব সড়কের হৈমবালা বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে প্রায় অর্ধকিলোমিটার জুড়ে এবং তাড়াশের ঈদগাহ মাঠজুড়ে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যের দইয়ের পসরা বসেছে।

দইয়ের সঙ্গে রসনাবিলাসী খই, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, কদমা, মিষ্টিসহ বিভিন্ন মিষ্টান্নও বেচাকেনা হয়। এই দই মেলা উপলক্ষে মুসলিম-হিন্দু দুই সম্প্রদায়ের পরিবারের জামাই, বউদের বাড়িতে আনাসহ আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করা হয়। বিভিন্ন প্রকার দই দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়।

সিরাজগঞ্জে ৩০০ বছরে দইমেলা

এই দইমেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্প। তাড়াশ উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি প্রশান্ত ঘোষ ও সনাতন সংস্থার সভাপতি তপন কুমার গোস্বামী জাগো নিউজকে জানান, তৎকালীন জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন।

জনশ্রুতি আছে, জমিদার রাজা রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টি পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সামনে রসিক লাল রায় মন্দিরের পার্শ্বের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিন ধরে দই মেলা বসতো। প্রতিবছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে দই মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে বেচাকেনা করতেন।

কথিত আছে, সবচেয়ে ভালো ও সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে পুরষ্কৃতও করা হতো। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে থেকে শুরু হওয়া দইয়ের মেলা এখনও মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বার্ষিক রেওয়াজ রয়েছে। যদিও তিনদিনের মেলার সময় কমে এখন দাঁড়িয়েছে একদিনে।

সিরাজগঞ্জে ৩০০ বছরে দইমেলা

তাড়াশে দই বিক্রি করতে আশা আনন্দ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ ও দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা বেশি থাকায় দই অবিক্রিত থাকে না।

সিরাজগঞ্জ শহরের দই মেলায় দই নিয়ে আসা এনায়েতপুরের রনজিত ঘোষ ও রাজাপুর গ্রামের সুধীর ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ৫০ বছর ধরে এ মেলায় দই বিক্রি করছি। এবার ৫০০ খুঁটি দই আনা হয়েছিল। ১১ টার মধ্যেই ৩০০ দই বিক্রি হয়ে গেছে। গত বছরের চেয়ে এবারে দই এর চাহিদাও ছিল বেশি।

সিরাজগঞ্জে ৩০০ বছরে দইমেলা

শহরে দই কিনতে আসা শওকত আলী নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর দই মেলাকে সামনে রেখে পরিবারের সদস্যরা দই খাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে। কারণ বিভিন্ন স্বাদের দই পাওয়া যায়। এবারও তিন রকমের দই কিনলাম।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু জাগো নিউজকে বলেন, শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ দই মেলা বসে থাকে। সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় এই মেলা প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্য।

এম এ মালেক/এনআইবি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।