পায়ে শিকল বেঁধেই এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০২:৩০ পিএম, ০৬ মার্চ ২০২৪

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী নেহাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে পায়ে শিকল পড়া অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মো. আলম মিয়া (১৬)। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও সে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতো। একটি ঘটনায় হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারানোয় আলমের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি।

জানা গেছে, আলম মিয়া ভুরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক আব্দুল আলীমের ছেলে। তিলাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি সমান পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে সে।

আলম মিয়া কিছুদিন আগেও সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। দুই সপ্তাহ আগে বাবার অটোরিকশায় ভুরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে সে সোনাহাট স্থলবন্দরের উদ্দেশ্য রওনা হয়।পথে অটোরিকশায় থাকা যাত্রীরা আলম মিয়াকে একটি সমুচা খেতে দেয়। সমুচা খাওয়ার পর থেকে অসংলগ্ন আচরণ শুরু করে। স্থলবন্দর যাওয়ার আগে কৌশলে ওই ৪ ব্যক্তি পালিয়ে যায়। পরে পরিচিত এক অটোরিকশা চালক তাকে বাসায় নিয়ে আসে। সেই থেকে তার আচার আচরণে পরিবর্তন শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে সমুচায় অতিরিক্ত চেতনানাশক মিশিয়ে অটোরিকশাটি চুরির উদ্দেশ্য ছিল চক্রটির।

আলম মিয়ার বাবা আব্দুল আলিম বলেন, ওই ঘটনার পর থেকে আলম মিয়ার মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দেয়। মাঝে মাঝে স্মৃতিশক্তি ফিরে পায় এবং স্বাভাবিক আচরণ করে। তবে প্রায় সময় সে পাগলামী করছে। এছাড়াও বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফেরে না। বিভিন্ন জায়গায় রাত্রি যাপন করে। এ কারণেই তার পায়ে শিকল বেঁধে আটকে রাখা হয়। ডাক্তার দেখিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, টাকার জন্য উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমাকে ও তার মাকে আলম কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে না। তাই সবসময় দাদাকেই তার সঙ্গ দিতে হয়।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব হারুন উর রশীদ জানান, ছেলেটি অসুস্থ হওয়ার কারণে তাকে একটি আলাদা কক্ষে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। খাতায় লিখলেও মাঝে মাঝে চিল্লাচিল্লি করে, অশান্ত হয়ে যায় এবং লিখতে চায় না।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএসএম সায়েম জানান, আলম মিয়ার পরিবার ও তার সঙ্গে কথা বলে যেটি মনে হয়েছে, সে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে আবারো সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে সে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।