২১ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া, ঈদের আগে জানলেন হারিয়েছেন চাকরি
বগুড়ার আট উপজেলায় ৩২ আউটসোর্সিং কর্মচারী বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘ ২১ মাস তারা বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন। দাপ্তরিক জটিলতার অজুহাতে বেতন আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এ নিয়ে কর্মচারীরা বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও সুরাহা পাচ্ছে না। বেতন কবে পাবেন তা না জানলেও ঈদ বোনাস হিসেবে পেয়েছেন চাকরি হারানোর সংবাদ।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বকেয়া বেতন ও চাকরি ফেরত পাওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের ৫৩ উপজেলায় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টিকিট ক্লার্ক, বাবুর্চি ও নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ পান মোট ৪৫৯ জন। এরমধ্যে বিভিন্ন পদগুলোতে নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সারমী ট্রেডার্সের মাধ্যমে বগুড়ায় ৩২ জন রয়েছে। পরে আরও দুই বছরের জন্য তাদের নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। উপজেলা পর্যায়ে কর্মচারী প্রত্যেককে মাসিক ১৬ হাজার ১৩০ টাকা করে বেতন পরিশোধের শর্ত ছিল। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত বেতন পেয়েছে এসব কর্মচারী। পরে মেয়াদ বৃদ্ধি হলেও ২০২২ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২১ মাসে কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে গত ১ এপ্রিল সিভিল সার্জন শফিউল আজমের স্বাক্ষর করা এক নোটিশে তাদের চাকুরিচ্যুতি করা হয়।
ভুক্তোভোগী কর্মচারীদের অভিযোগ, আউটসোর্সিংয়ের এ চাকরিটি পেতেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে ঘুষ দিতে হয়েছিলো দুই থেকে তিন লাখ টাকা। এমনকি ভুক্তভোগীদের বেতন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হওয়ার পর প্রতিমাসেই বেতন থেকেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দিতে হতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০ মাস চাকরির পর হঠাৎ তাদের বাদ দেয়ার ঘোষণা শুধুমাত্র নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যেই বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া টিকিট ক্লার্ক মরিয়ম খাতুন বলেন, বেতন দেবে দেবে বলে গত ২১ মাস ধরে আমাদের কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কোনো সুরহা না হতেই চাকুরিচ্যুতি করা হলো। ঠিকাদারকে ফোনে পাওয়া যায় না। মাঝেমাঝে ফোন খোলা থাকলেও নানা অজুহাত দেখান। সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ধরণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পরিবারে দুই ছেলে, স্বামী ও শ্বশুড়-শাশুড়ি আছেন, ঈদে তাদের কিছু কিনেও দিতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, চাকরি পেতে ঠিকাদারকে তিন লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলাম। প্রতিমাসে যা বেতন পেতাম সেখান থেকেও দুই হাজার টাকা দিতে হতো। একূল ওকূল সবই হারিয়ে ঈদের বোনাস হিসেবে চাকরি হারিয়েছি।
গাবতলী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকিট ক্লার্ক আজিজুল হক বলেন, স্ত্রী ও সন্তানরদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না৷ আত্মহুতি ছাড়া কোনো উপায় আছে? ঠিকাদার মাসের পর মাস প্রতারণা করে যাচ্ছেন, কেউ ব্যবস্থা নেয়নি! এখন চাকরিও নেই। ২১ মাসের বেতনের টাকা আমাদের কে দেবে?
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সারমী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও ঠিকাদার আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷
কর্মচারীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় কর্মচারীদের অব্যাহতি দিয়েছে। তবে বকেয়া বেতনের ঘটনা সত্য। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি অসহযোগিতা করেন। ঢাকায় কথা বলেছি আশাকরি ঈদের পর ৩২ কর্মচারীর বকেয়া পরিশোধ করা হবে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা না করলে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
এএইচ/জিকেএস