নিরাপদ সড়কের দাবিতে কালো কাপড় বেঁধে স্কুল শিক্ষার্থীর অবস্থান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৪:৩৪ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের দাবিতে নওগাঁয় চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।

রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ওই শিক্ষার্থী ঘণ্টাব্যাপী শহরের তাজের মোড় ও ব্রিজের মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করে।

ওই শিক্ষার্থীর নাম ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া। সে নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে কালো কাপড় বেঁধে স্কুল শিক্ষার্থীর অবস্থান

এসময় তার হাতে থাকা পোস্টারে লেখা ছিল, ‘সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ চাই।’ এসময় পথচারীরাও তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

ছোঁয়ার কর্মসূচি সম্পর্কে জুলফিকার রহমান নামে এক পথচারী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সড়কে কেউ নিরাপদ নয়। বাসা থেকে বের হলে সুস্থভাবে নিরাপদে ফিরতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এক শিশু শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। সবারই উচিত নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হওয়া।

আরেক পথচারী বলেন, প্রতিদিনই সড়কে তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। তাই তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বাচ্চাটির এমন দাবি খুবই যৌক্তিক। আমরা তার দাবিকে সমর্থন করছি। তাকে দেখে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সবাই এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া বললো, টেলিভিশন-পত্রিকাতে প্রতিদিন যে মৃত্যুর খবর দেখি তার অধিকাংশই সড়ক দুর্ঘটনাজনিত। রাস্তায় বের হলে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয়ও লাগে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে কালো কাপড় বেঁধে স্কুল শিক্ষার্থীর অবস্থান

সে আরও বলে, বেশ কয়েকদিন আগে নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এক দম্পতি। আর বেঁচে যায় তাদের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু। একবার ভাবুন, সেই শিশুটির কী হবে? শিশুটি সারাজীবনের জন্য বাবা-মার আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। আমি চাই নিরাপদ সড়ক। নিরাপদে সড়কে চলাফেরা করতে চাই। সরকারের কাছে আবেদন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার বাবা সঙ্গীতশিল্পী খাদেমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত ১৮ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকে জনপ্রিয় শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিল। এর আগে ১৭ এপ্রিল নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামে এক দম্পত্তি। আর বেঁচে যায় তাদের পাঁচ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম। এ ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটে যায়। মেয়েটি আমার এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। যে কারণে সে বলেছে, আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই। মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি। যার কারণে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা একাই যেভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবি করেছে। এভাবে দেশের সবাই যদি এমন করে সচেতন হতো ও দাবিগুলো তুলে ধরতো, তাহলে প্রতিদিন এমন প্রাণহানির ঘটনা অনেকটাই কমে আসতো। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাই। আর এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, যানবাহন চালক ও মালিকদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নওগাঁ জেলার সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যানবাহন চালক ও মালিকদের সচেতনও করছি। শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার এমন উদ্যোগ আমাদের মুগ্ধ করেছে। এমন দাবি ও সচেতনতাবোধ যদি সবার মাঝে জাগ্রত হতো তবে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে নিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করি।

মশিউর রহমান/এনআইবি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।