দাবদাহে শরবত ও ডাবের চাহিদা তুঙ্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৮:০০ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২৪

প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে দেশ। বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই। এপ্রিলের প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে এ গরম। এ অবস্থায় প্রখর রোদ আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনমানুষ স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন ফুটপাতের শরবতে। বগুড়া শহরের প্রায় সবগুলো সড়কেই ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। মূলত রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীরা ভিড় করছেন সেখানে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে বগুড়ায় সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গরমের তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন রকম শরবত বিক্রি হচ্ছে ভাসমান দোকানগুলোতে। এরমধ্যে লেবুর শরবতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়া রয়েছে ইসবগুলের ভুসি, অরেঞ্জ পাউডার, শাহিদানা ও অ্যালোভেরা শরবত।

দাবদাহে শরবত ও ডাবের চাহিদা তুঙ্গে

দুপুরে শহরের সাতমাথায় দাঁড়িয়ে শরবত পান করছিলেন রিকশাচালক সবুজ শেখ। তিনি বলেন, ‘সকাল ৯টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। তখন থেকে এ পর্যন্ত চার গ্লাস শরবত খেয়েছি। ঠান্ডা শরবত ছাড়া এ তাপদাহে রিকশা চালানো অসম্ভব। প্রচণ্ড গরমে অনেক ঘামছি, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। গরমের কারণে সব খ্যাপ নিতে পারি না। চার থেকে পাঁচটা ট্রিপ শেষ করে লম্বা সময় বিশ্রাম করতে হয়।’

সবুজ আরও বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৪২০ টাকা রোজগার করতে পেরেছি। এরমধ্যে ৮০ টাকা শরবতের পেছনেই খরচ হয়েছে। গরম কম থাকলে অন্তত ৬০০ টাকার মতো আয় হতো।’

গত তিন বছর ধরে সাতমাথা এলাকায় শরবত বিক্রি করছেন আহসান হাবিব। তিনি বলেন, ‘গরমের সঙ্গে সঙ্গে এখন শরবতের দোকানও বেড়েছে। এখন এ এলাকাতেই ২০টি দোকান আছে। তাই আগের তুলনায় আমার বিক্রি কমেছে।’

শরবতের দাম ও উপকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে পাঁচ টাকা করে প্রতি গ্লাস লেবুর শরবত বিক্রি করেছি। এখন ১০ টাকা রাখি। সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতি জার পানি ৪০ টাকা করে কিনতে হয়। এছাড়া বরফ, লেবু, চিনি এসবের দামও আছে।’

আরও পড়ুন

শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় শরবত বিক্রেতা আলমাস হোসেন বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে ফুটপাতে শরবত বিক্রি করি। এখানে মূল সমস্যা প্রচণ্ড ধুলাবালি আর ব্যাপক জ্যাম। একা দোকান সামলানো যায় না। সঙ্গে একজন সহকারী আছে। প্রতিদিন ২-৩ হাজার টাকার শরবত বিক্রি হয়। এরমধ্যে সহকারীকে দিতে হয় ৪০০ টাকা।

বেড়েছে ডাবের দাম ও চাহিদা

গ্রীষ্মের খরতাপে তৃষ্ণা মেটাতে সবারই প্রথম পছন্দ ডাব। কিন্তু ডাবের দাম অনেক বেশি থাকায় সাধারণ মানুষ এখন ডাব কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। গরমে চাহিদা বাড়ায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দামও। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে আকারভেদে প্রতিপিস ডাবের দাম বেড়েছে ২০-৪০ টাকা।

বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে ফুটপাতে ভ্যানে করে বিক্রি করা ডাবের দোকান ঘুরে দেখা যায়, বড় আকারের প্রতিপিস ডাব বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৮০ টাকায়। যা আগে ছিল ৯০-১২০ টাকা। মাঝারি আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। আর ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়।

দাবদাহে শরবত ও ডাবের চাহিদা তুঙ্গে

বিক্রেতারা জানান, গত কয়েকদিনের তীব্র গরমে বগুড়ায় ডাবের চাহিদা বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। যে কারণে পাইকারি বাজারেই বেড়েছে ডাবের দাম। আর এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। বগুড়া শহরে প্রায় সবগুলো মোড়ে ডাবের খুচরা ব্যবসায়ী আছে। মূলত ভ্যানে করে এসব খুচরা ডাব বিক্রি করা হয়। প্রায় ২০০ জন বগুড়া শহরে ডাবের খুচরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

শহরের বড়গোলা মোড়ে ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করেন মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিপিস ডাব আমরা ৯০-১২০ টাকায় কিনি। বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। তাই ২০-৩০ টাকা লাভ না রাখলে পোষাবে না। গরমের কারণে আড়তেই ডাবের দাম বেশি।

ডাবের দাম বাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সুযোগ পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেন।

মফিজ পাগলার মোড়ে ডাব খেতে খেতে আবু হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘১২০ টাকা দিয়ে মাঝারি আকারের একটি ডাব কিনেছি। এই ডাব কয়দিন আগেও ৮০-৯০ টাকা ছিল। ব্যবসায়ীরা আসলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়।’

ডাবের মতোই চাহিদা বেড়েছে আখের রসের। শহরের সাতমাথায় ৫-৭টি ভ্যানে আখ পিষে রস তৈরি করা হচ্ছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে আখের রসের দামও গ্লাসপ্রতি ১০ টাকা করে বেড়েছে। আগে প্রতিগ্লাস ১০-২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সর্বনিম্ন ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আখের রস ব্যবসায়ী খোকন মিয়া বলেন, ‘এখন আখ কেনাই পড়ছে বেশি। এজন্য গ্লাসপ্রতি ১০ টাকা দাম বেড়েছে। গরমের তীব্রতা বাড়ায় আখের রসের চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক।’

এদিকে ফুটপাতের দোকান থেকে শরবত পানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।

সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আরএমও ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ফুটপাতের শরবতে অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। এগুলো থেকে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন-টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস হতে পারে। ফুটপাতে শরবত খাওয়ার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে বোতলে বিশুদ্ধ পানি বহন করাই সব থেকে ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।