সিজারিয়ান অপারেশনে নাড়ি কেটে ফেলার অভিযোগ, প্রসূতির মৃত্যু
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখানে বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় জান্নাতুল ফেরদৌস জেনি (৩০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৬ জুলাই) দিনগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত জেনি ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের লোহারপুকুর পাড় এলাকার সিঙ্গাপুর প্রবাসী নাঈম মোল্লার স্ত্রী। তাদের নুজহা নামে চার বছরের এক কন্যাসন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের সময় এ ঘটনা ঘটে। তবে নবজাতকটি সুস্থ রয়েছে।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, আগামী মাসের শেষের দিকে জেনির বাচ্চা প্রসবের সময় ছিল। জেনি গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতালে চেকআপ ও চিকিৎসা নিতেন আসতেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি ও চেকআপ করাতে হাসপাতালে আসেন। তখন হাসপাতালের চিকিৎসক শিরীন শারমিন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, বাচ্চার সমস্যা আছে। সময়ের আগেই সিজারিয়ান অপারেশন করতে হবে। স্বজনরা তাদের কথায় জেনির সিজারের অনুমতি দেন।
সন্ধ্যার পর সিজারিয়ান অপারেশন শুরু করেন চিকিৎসক শিরীন শারমিন। এতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। একপর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। ঢাকা থেকে চিকিৎসক আনতে হবে। পরে ঢাকা থেকে চিকিৎসক এসেও রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি রাতে রোগীকে রাজধানীর ডেল্টা হাসপাতাল রেফার করেন। পরে ডেল্টা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক রোগীর অবস্থা গুরুতর দেখে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে সেখান থেকে অন্য একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরু করা হয়। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে জান্নাতুল ফেরদৌস জেনি চিকিৎসাধী অবস্থায় মারা যান।
নিহতের দেবর ইব্রাহিম বলেন, ‘কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক শিরীন আক্তার আমার ভাবির একটি নাড়ি কেটে ফেলেন। তার ভুল চিকিৎসায় আমার ভাবিকে অকালে প্রাণ দিতে হলো। আমরা চাই এর বিচার চাই।’
জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক রায়হান মল্লিক বলেন, চিকিৎসা ঠিক ছিল, অবস্থা খারাপ হওয়া ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে আইসিইউতে মারা গেছেন। বিষয়টি তারা স্থানীয় একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে মীমাংসা করেছেন। এ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই।
সিরাজদীখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সকালে বিষয়টি শুনতে পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে নিহতের পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তাই আমরাও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহমেদ বলেন, উপজেলায় যেসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলছে এবং সিজারিয়ান অপারেশন করছে, তাদের বিরুদ্ধে আগেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। নতুন করে আবারও অভিযান চালানো হবে। সেইসঙ্গে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ২০২১ সালে একই হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় বৃষ্টি নামের ১৭ বছরের এক তরুণী এবং চলতি বছরের মাস তিন আগে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
আরাফাত রায়হান সাকিব/এসআর/এমএস