হুমকিতে কৃষিজমি
অবৈধ ইটভাটায় যাচ্ছে গড়াই পাড়ের মাটি
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গড়াই নদীর তীর থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। প্রতিদিন শত শত গাড়ি মাটি চলে যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটায়। এতে হুমকিতে পড়েছে নদীর পাড়, গ্রামীণ সড়ক ও কৃষি জমি। আইন অমান্য করে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় এভাবেই নদী তীরের মাটি কাটা চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যক্তি নদীর কুল থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি খাস জমির মাটি কেটে তা ইটভাটায় বিক্রি করছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী জামাল, মিঠু ও যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ইউপি সদস্য আবুল কালাম প্রকাশ্যে মাটি কেটে সেলোইঞ্জিন চালিত অবৈধ লাটাহাম্বা গাড়িতে তুলে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে বিক্রি করছেন। এতে হুমকিতে পড়েছে নদীর পাড় ও কৃষি জমি। ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর কুল ও সড়ক ঘেঁষে কলা, বেগুন, শাক-সবজিসহ হরেক রকম ফসলের চাষাবাদ হয়েছে। অপরদিকে গ্রামীণ কাঁচা সড়কটি কেটে গাড়ি ওঠা-নামার পথ করা হচ্ছে। গড়াই নদীপাড়ের প্রায় ৫০ মিটার দূর থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে তা লাটাহাম্বা গাড়িতে রাখা হচ্ছে। সেখানে বেশ কয়েকজন শ্রমিক ও কয়েকটি লাটাহাম্বা গাড়ি রয়েছে। তবে শ্রমিকরা মাটি কাটার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কে বা কার মাটি কাটছেন তাও বলেননি তারা।
গড়াই নদীর কুলঘেঁষে মাটি কাটার জন্য পথ তৈরি করছেন স্থানীয় কৃষক মজিবর রহমান (৫৫)। তিনি বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। এখানে ভালো ফসল হয় না। সেজন্য প্রতি গাড়ি মাটি ২৮০ টাকা দরে ইটভাটায় বিক্রি করছি।
গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক টুটুল হোসেন বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটায় অন্যান্য কৃষি জমি হুমকির মুখে পড়ছে। রাস্তা-ঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কিছু বললেই আসে নানান বাধা-হুমকি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ভালো রাস্তা কেটে গাড়ি তোলার পথ করছে। এতে মানুষ ও অন্যান্য গাড়ি চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে।
গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, ইটভাটার মৌসুম শুরু হলেই নদী থেকে মাটি-বালু কাটা হয়। শত শত অবৈধ গাড়ি চলে সড়কে। এতে শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।
তবে মাটি কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন তিনি চরে যান না। কে বা কারা মাটি কাটছে এ ব্যাপারে তিনি জানেন না।
অভিযুক্ত প্রভাবশালী জামাল হোসেন বলেন, তিনি টাকা দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে মাটি কিনে ভাটায় বিক্রি করছেন। এটা অবৈধ কিছু না।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ইয়ামিন হক বলেন, চলতি বছরে নদী শাষণের বালু ফেলে গোবিন্দপুর এলাকায় কয়েক কিলোমিটার পাড় বাধা হয়েছে। মাটি কাটলে পাড় ধসে যেতে পারে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হবে।
ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেখে পুকুর খনন বা মাটি কাটায় আইনে নিষেধ রয়েছে বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত।
তিনি জানান, খুব দ্রুতই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র কেমিস্ট হাবিবুল বাসার জানান, কুষ্টিয়া জেলায় ১৭০টির মতো ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১৫টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি সবগুলো ভাটা অবৈধ। এছাড়া কুমারখালী উপজেলায় ৩০টি চিমনী ইটভাটা রয়েছে, যার সবগুলোই অবৈধ। এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই কঠোর অভিযান শুরু করা হবে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, জেলায় যেসব অবৈধ ইটভাটা রয়েছে সেগুলোতে খুব শিগগিরই পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আর নদী তীরের মাটি যারা কাটছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আল-মামুন সাগর/এফএ/এমএস