পানির নিচে অনুসন্ধানে সিঙ্গাপুর চীন যেতে হতো, এখন দেশেই সম্ভব

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৪:৩৪ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৫

২০২৩ সালে বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ রোবোটিকস প্রতিযোগিতা রোবোসাবে রানার আপ হয় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের তৈরি স্বয়ংক্রিয় ডুবোযান ‘ব্র্যাকইউ ডুবুরি’। পরে স্টার্টআপে রূপ নেয় ডুবুরি, নাম হয় ডু্বোটেক।

সমুদ্র কিংবা নদী, গভীর পানির নিচে লুকিয়ে থাকা রহস্য, সম্ভাবনা খুঁজে বের করে ডু্বোটেক। প্রতিষ্ঠানটির কাছে থাকা রোবটপ্রযুক্তি পানির নিচে পরিদর্শন এবং লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন সম্পদের খোঁজ করে।

বন্দরে কোনো জাহাজ এলে তা পরিদর্শন করে ডুবোটেকের তৈরি বিশেষ রোবট। অ্যাকুয়াকালচার বা পানির নিচে মাছসহ বিভিন্ন জলজ চাষের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে তাদের রোবট। বর্তমানে তাদের টুনা ১.০, অক্টোপাস ২.০ ও হিলশা ১.০ তিনটি রোবট আছে। এর মধ্যে হিলশা হলো পানির নিচের স্বয়ংক্রিয় যান, এটি মূলত গবেষণা ও উন্নয়নকাজে ব্যবহৃত হয়। টুনা ও অক্টোপাস হলো দূরনিয়ন্ত্রিত যান। ছবি তোলা ও সামুদ্রিক প্রাণবিষয়ক গবেষণা কাজ করে টুনা। অক্টোপাস ব্যবহৃত হয় জাহাজ পরিদর্শনের কাজে। ডুবো ওএস ও ইন্সপেক্টর নামের দুটি সফটওয়্যার দিয়ে এসব রোবট পরিচালনা করা হয়।

পানির নিচে অনুসন্ধানে সিঙ্গাপুর চীন যেতে হতো, এখন দেশেই সম্ভব

ডুবোটেক দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করেছে। বর্তমানে পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা। ডুবোটেক সম্প্রতি শার্ক ট্যাঙ্ক ফ্র্যাঞ্চাইজির বাংলাদেশে অংশগ্রহণ করে। সেখানে তারা ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ অর্জন করে।

চলমান বিনিয়োগ সম্মেলনে ডুবোটেকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা সৌমিক হাসান শ্রান্তর সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইফুল হক মিঠু

পানির নিচে অনুসন্ধানে সিঙ্গাপুর চীন যেতে হতো, এখন দেশেই সম্ভব

জাগো নিউজ: ডুবোটেক কী ধরনের কাজ করে?

সৌমিক হাসান শ্রান্ত: আমরা পানির নিচে চলাচলে সক্ষম রোবট নিয়ে কাজ করি। মেরিন ইন্ডাস্ট্রি কিংবা পানির নিচে যা আছে তা দেখা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করি। মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহও করতে পারি। পানি দূষণ হ্রাস, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমে আমাদের রোবটগুলো কাজ করে। পাশাপাশি মানুষের জন্য অভিযান পরিচালনা করা দুরূহ- এমন ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা পরিচালনার কাজ আমরা করি।

জাগো নিউজ: আপনারা এখন পর্যন্ত কাদের সঙ্গে কাজ করেছেন? আপনাদের লক্ষ্য কী?

সৌমিক হাসান শ্রান্ত: আমরা চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রতিষ্ঠানগুলোকে পানির নিচে ডেটাসহ নানান তথ্য-উপাত্ত প্রদান করেছি। পাশাপাশি পানির নিচে মাল্টি লেয়ার সমস্যা বা পানির নিচে ঘোলা সমস্যার সমাধান করি। আমাদের তিনটা রোবট আছে। এই রোবট দিয়ে আমরা সমস্যা সমাধান করতে পারি। আমরা এ খাতে গ্লোবাল লিডার হতে চাই। এজন্য বিনিয়োগ খুঁজছি।

পানির নিচে অনুসন্ধানে সিঙ্গাপুর চীন যেতে হতো, এখন দেশেই সম্ভব

জাগো নিউজ: এ ধরনের স্টার্টআপের পরিকল্পনা মাথায় এলো কীভাবে?

সৌমিক হাসান শ্রান্ত: সাত বছর যাবৎ কাজ করছি। আমরা ব্র্যাক ডুবুরি নামেও পরিচিত। ২০১৮ সালে প্রজেক্ট শুরু হয়েছিল কয়েকজন বড় ভাইয়ের হাতে ধরে ব্র্যাক ডুবুরি নামে। পরে আমরা স্টার্টআপে রূপান্তরিত হই। রোবোসাবে আমরা রানার্সআপ হয়েছি।

জাগো নিউজ: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সৌমিক হাসান শ্রান্ত: আরও উন্নত ও হাই পারফরম্যান্স বেজড রোবট বানাতে চাই। যাতে চট্টগ্রাম বন্দরসহ আরও গভীর সমুদ্রে আমরা কাজ করতে পারি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা কাজটা শুরু করতে চাই। এই খাতটা অনেক বড়। বাংলাদেশের জাহাজগুলোকে সিঙ্গাপুর বা চীন যাওয়া লাগে এ ধরনের সেবাগুলো নিতে। আমরা সেই সেবাগুলো দিতে চাই। বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে এ ধরনের কোনো প্রযুক্তি নেই।

জাগো নিউজ: আপনাদের বিজনেস মডেলটা কী?

সৌমিক হাসান শ্রান্ত: আমরা বিটুবি মডেলে কাজ করি। রোবটগুলো রেন্টাল হিসেবে যায়। সেখানে আমাদের টিমও যায়। জাহাজের নিচে পর্যবেক্ষণ, সমুদ্র বা কোনো এলাকায় পর্যবেক্ষণ, কোন ধরনের তথ্য লাগবে- এগুলোর ওপর নির্ভর করে আমরা চার্জটা নেই। আমরা ১০টার বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি। দেশের শীর্ষ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিয়েছি।

এসএম/এমএমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।