একনজরে দেশের উল্লেখযোগ্য ১০ কৃষিপণ্য

কৃষিতে আশাতীত সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একই সঙ্গে বেড়েছে পুষ্টির নিরাপত্তাও। তাতে বাংলাদেশের কৃষিকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করছে বিশ্ব। দেশে উৎপাদনের ভিত্তিতে প্রধান ১০ কৃষিপণ্যের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
চাল
দেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় চাল। নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পরেও দেশে ৩০ থেকে সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল বাড়তি রয়ে যাচ্ছে। এ কারণে রফতানিও হয়েছে কয়েকবছর।
চলতি অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টন। গত অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন।
স্বাধীনতার পরবর্তী দেশে চালের উৎপাদন তিন গুণ বেড়েছে। এখন দেশের উৎপাদিত চালের ৫৫ ভাগই আসে বোরো ধান থেকে। বাকিটা যোগান দেয় আউশ ও আমন। এখান বছরে একই জমিতে তিনবারও ধান উৎপাদন করা যায়।
সবজি
চালের পরে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন সবজির। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সবজি বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষকই। এমনকি কৃষির সঙ্গে জড়িত নন, তারাও এখন সবজি চাষ করছেন ছাদ-বাগানে।
গত বছর দেশে সবজি উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার টন। এর মধ্যে শীতের সবজি ১ কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার টন। দেশের ৫ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের সবজি চাষ হচ্ছে। আর প্রতি হেক্টরে ফলন গড়ে প্রায় সাড়ে ২৩ টন। বাংলাদেশ থেকে সবজি রফতানিও হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
আলু
উৎপাদন বিবেচনায় আলু এখন অন্যতম ফসল। চাহিদার তুলনায় এখন অনেক বেশি আলু দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। রফতানিও হচ্ছে কিছু অংশ। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকায় বাংলাদেশের আলু রফতানি হয়।
গত বছর দেশে আলুর উৎপাদন ১ কোটি ৯ লাখ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১৩ লাখ। প্রতি হেক্টর জমিতে এখন গড়ে সাড়ে ২৩ টন আলুর ফলন হচ্ছে। নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি আলুতে সম্ভাবনার যোগান দিচ্ছে।
ভুট্টা
গত এক দশকে শস্যটির উৎপাদন পাঁচগুণ বেড়েছে। এখন দেশে ৫৪ লাখ টন ভুট্টা হচ্ছে। আর আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শস্যটির উৎপাদন ১ লাখ টনে উন্নীত করার জন্য কাজ করছে সরবার।
ভুট্টার উৎপাদন যেমন বাড়ছে, চাহিদাও বাড়ছে। মাছ ও পোল্ট্রি শিল্পের খাবারের কাঁচামাল হিসেবে শস্যটি এতটাই ব্যবহার হয় যে, এখনো বাড়তি ভুট্টা আমদানি করা হয়। বাজারে গত কয়েকবছর ধরে শস্যটির ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।
গম
২০২০ সালে গম উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন, যা স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে উৎপাদিত পরিমাণের অর্ধেক ছিল। দেশের সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে শস্যটি উৎপাদন হয়। বিগত এক দশকে গমের ফলনও দ্বিগুণ বেড়ে এখন হেক্টরপ্রতি ৩ দশমিক ৬৪ টনে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতনতার জায়গা থেকে অনেকে রুটি খাচ্ছেন। এসব কারণেও দেশে রুটি, পাউরুটি ও আটা থেকে তৈরি খাদ্যের ভোগ বাড়ছে। এ করণে গমের চাহিদা খুব বেশি। উৎপাদনের পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের গমের আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।
পাট
বর্তমানে দেশে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৭৫ লাখ বেল পাট উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে দেশি ও তোষা এই দুই জাতের পাট চাষ করা হয়। তবে কেনাফ ও মেসতা জাতের পাটও বাংলাদেশে চাষ করা হয়, যার মান ততটা উন্নত নয়।
দেশের এ সোনালী আঁশের উৎপাদনে বড় প্রতিবন্ধকতা ভালো মানের বীজ। বাংলাদেশে ৬ থেকে ৭ হাজার টন চাহিদার প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ পাটবীজ আমদানি করা হয় পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে। এ কারণে পাটে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক।
তবে পাট চাষ নিশ্চিতে বীজ সরবরাহে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মানসম্মত পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পাঁচ বছরের জন্য কৃষি ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে।
আখ
বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে আখের আবাদ হয়। যার পরিমাণ ১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চিনিকল রয়েছে এমন এলাকায় আখের চাষ হয় অর্ধেক। বাঁকিটা সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত।
গত বছর আখের উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার টন। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬০ টন আখ উৎপাদিত হয়। উন্নতজাতের ক্ষেত্রে এ উৎপাদন আরও ১০-২০ টন বেশি।
তেলবীজ
সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম ও সয়াবিন থেকে দেশে তেল উৎপাদন হয়। তবে পরিমাণ চাহিদার তুলনায় খুব সামান্য। এখন সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন তেলবীজ হচ্ছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরিষা। চার লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে শুধু সরিষা চাষ হয়। এ থেকে মোট ফলন হয় ছয় লাখ টন। এ সরিষা থেকে ২ দশমিক ৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়।
ডাল
বছরে দেশে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টন ডাল উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি মসুর ও খেসারি। এছাড়া মুগ, মটর, মাসকালাই, ছোলা ও ফেলন ডালের চাষ হচ্ছে দেশে। বিভিন্ন এলাকার ৭ লাখ হেক্টর জমিতে এসব ডাল চাষ হয়। অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে উৎপাদন এক টনের সামান্য বেশি। দেশে এ শস্যটির চাহিদার ৬০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে।
মসলা
দেশে গত ২০ বছরে মসলার উৎপাদন আট গুণ বেড়েছে। দেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলা ব্যবহার হয়। এর ৬০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বাকি ৪০ শতাংশ মসলা আমদানি করতে হয়।
দেশে উৎপাদিত মসলার পরিমাণ ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টনেরও বেশি। এসব মসলার চাষ হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও হলুদের চাষ হয় ৯০ শতাংশ জমিতে।
এনএইচ/এমআরআর/এমএস