পাওয়ার টিলারের দাম কমবে
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পাওয়ার টিলারের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর ফলে আগামী অর্থবছরে পাওয়ার টিলারের দাম কমবে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী এ তথ্যা জানান। জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন মন্ত্রী।
বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষিকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃষকদের কৃষিযন্ত্রের ক্রয়মূল্যের ওপর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তার মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলারসহ প্রায় ৭১ হাজার ৫০২টি কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। এর ফলে কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে এবং কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় কমেছে। এছাড়া, আমরা ২০২০-২০২৫ মেয়াদে তিন হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি, যার আওতায় ১২ ক্যাটাগরিতে ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সুবিধা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে একসঙ্গে ধানের চারা তৈরি, রোপণ ও কর্তনের জন্য সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং কৃষি বিপণন ব্যবস্থাসহ সার্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল একপ্রকার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। এ সময় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কবাণী প্রদান করেছিল। বাংলাদেশে কৃষিখাতের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমাদের সরকার প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমরা দেশে কৃষির উৎপাদনধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, চালের বাজারদর নিয়ন্ত্রণসহ স্বল্প-আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য প্রাপ্তি সহজলভ্য করার লক্ষ্যে আমরা ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সুলভমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করেছি। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরেও এ কর্মসূচিতে পাঁচ দশমিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন চাল ও চার দশমিক ৮৫ লাখ মেট্রিক টন গমের ফলিত আটা বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরেও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। ৫০ লাখ নিম্ন-আয়ের পরিবারকে বছরে কর্মাভাবকালীন সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল, অর্থাৎ ৫ মাসব্যাপী ১৫ টাকা কেজি দরে পরিবারপ্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণপূর্বক খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়।
অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।
এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট। বাজেটে সঙ্গত কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এমওএস/কেএসআর/এমএস