করপোরেট কোম্পানির ‘কারসাজিতে’ নিঃস্ব প্রান্তিক খামারিরা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫৫ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২৩

দেশের ব্রয়লার মুরগির বাজারে অস্থিতিশীলতার জন্য ‘গুটিকয়েক’ করপোরেট কোম্পানিকে দুষছেন প্রান্তিক খামারিরা। তাদের অভিযোগ, প্রান্তিক খামারিদের মুরগি বিক্রির উপযোগী হলেই হঠাৎ দাম কমিয়ে দেন করপোরেট কোম্পানিগুলো। এতে একের পর এক লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। মূলত বড় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে ‘বাধ্য’ করতেই এমন ‘কারসাজি’ করছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।

বুধবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন অভিযোগ করা হয়। সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার এ সমস্যা সমাধানে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। সেখানে তিনি পোলট্রি বোর্ড গঠনের দাবিও জানিয়েছেন।

পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ডিম-মুরগি উৎপাদনকারী বড় চার (বিগ ফোর) কোম্পানি গত ২৩ মার্চ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে জানান, ব্রয়লার মুরগি ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি করলে নাকি তাদের লস (লোকসান) গুনতে হবে? অথচ অজানা কারণে এখন ১৫০-১৬০ টাকায় তারা মুরগি বিক্রি করছেন!’

এতে আরও বলা হয়, ‘এর মূল কারণ হচ্ছে, গত জানুয়ারিতে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লস (লোকসান) পড়ে খামার বন্ধ করে দেন। পরে ব্রয়লার মুরগির ভালো বাজার দেখে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদনে ফিরতে চান। ঠিক সেসময়ে কোম্পানিগুলো ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা মুরগির বাচ্চার দামও বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি দাম মেনে নিয়েও খামারিরা ধার-কর্জ করে খামার চালু করেন। তাদের খামারে মুরগি যখন বিক্রির উপযোগী হলো—তখনই করপোরেট কোম্পানিগুলো হঠাৎ ম্যাজিকের মতো মুরগির বাজার তলানিতে নিয়ে আসলো। যাতে প্রান্তিক খামারিরা লস করে আর টিকতে না পারে। তাদের সঙ্গে খামারিরা যেন চুক্তিতে যেতে বাধ্য হয়।’

করপোরেট কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতায় খামারিরা বারবার মার খাচ্ছেন উল্লেখ করে পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যখন প্রান্তিক খামারিদের মুরগি উৎপাদনে আসে, তখনই তারা বাজারের দাম কমিয়ে দিয়ে খামারিদের নিঃস্ব করে দেন। এর একটা সমাধান হওয়া দরকার।’

প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের তথ্য তুলে ধরা এতে আরও বলা হয়, ‘বর্তমানে দেশের প্রান্তিক খামারিদের এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৭০-১৭৫ টাকা। আর করপোরেট কোম্পানির উৎপাদনে খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। বর্তমানে প্রান্তিক খামারিদের এক কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে কোম্পানির বেঁধে দেওয়া ১৫০-১৬০ টাকা দরে। এতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে খামারির লোকসান হচ্ছে ২৫ টাকা।’

লোকসান দিয়ে আর কতদিন প্রান্তিক খামারিরা টিকে থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলে পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, ‘করপোরেট সিন্ডিকেট হঠাৎ দাম কমিয়ে লোকসানে ফেলে প্রান্তিক খামারিদের নিঃস্ব করে দেবেন। খামারি তাদের খামার বন্ধ করে দেবেন- এটা করতেই সবসময় খামারির উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে তারা মুরগির দাম কমিয়ে দেন। যাতে করে খামারিরা উৎপাদনে আর ফিরতে না পারেন। অথবা তারা যাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চুক্তির আওতায় যেতে বাধ্য হয়, সেজন্য সিন্ডিকেট করা হয়। এ সিন্ডিকেট বাজার থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়।’

সিন্ডিকেটে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে ‘যার প্রমাণ আগস্ট ২০২২ থেকে ১৫ দিনে ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ ও চলতি বছরের জানুয়ারি ৩১ তারিখ থেকে মার্চের ২৩ তারিখ পর্যন্ত মুরগি ও বাচ্চার অযৌক্তিক দাম বাড়িয়ে গুটিকয়েক করপোরেট কোম্পানি ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিন্ডিকেট করে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন থেকে সরিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ শিল্পেও তারা দখলদারি কায়েম করতে চাচ্ছেন। আমার তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’

সরকারকে এ খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নজর দেওয়া দরকার উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রান্তিক খামারিদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এতে খামারি বাজারে প্রতিযোগিতায় থাকবে। তা না হলে বাংলাদেশের ভোক্তারা করপোরেট গ্রুপের কাছে সবসময় জিম্মি হয়ে থাকবে, যার প্রমাণ এরইমধ্যে আপনারা দেখেছেন। অতএব, সরকারের এখনই নজরে নেওয়া দরকার এবং সমাধানের পথ খোঁজা দরকার।’

সংকট সমাধানে ৩ পরামর্শ
>> পোলট্রি বোর্ড গঠন করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি সায়েন্সের প্রফেসর ও পোলট্রি স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বোর্ড গঠন করতে হবে।

>> মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি ফিড উৎপাদন খরচ বের করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। একইসঙ্গে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বের করেও বিক্রয়মূল্য ঠিক করতে হবে।

>> প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির ন্যায্যমূল্য প্রতিষ্ঠা করে উৎপাদনে ধরে রাখতে হবে।

এএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।