‘দুর্বল’ লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ছুটছেই

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০২৩

আর্থিক ভিত্তি খুব একটা শক্ত না হলেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েই চলেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। মাত্র দুই সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। শেয়ারের এই দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না, বরং কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে।

প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দাম বাড়ার পেছনে কোনো বিশেষ চক্র রয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা খুবই কম। অল্প সংখ্যক শেয়ার হওয়ার কারণে বিশেষ চক্রের পক্ষ এই কোম্পানির শেয়ারের দাম খুব সহজে বাড়ানো সম্ভব। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ায় লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দাম বাড়ার শীর্ষস্থান দখল করেছে। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহ দাম বাড়ার শীর্ষস্থান দখল করলো কোম্পানিটির শেয়ার। গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের দাম ছিল ৫৬ টাকা ২০ পয়সা। এরপর দাম বাড়তে বাড়তে সপ্তাহ শেষে ৭৪ টাকা ৪০ পয়সায় থিতু হয়েছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৮ টাকা ২০ পয়সা বা ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

আগের সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ে ১২ টাকা ৭০ পয়সা বা ২৯ দশমিক ২০ শতাংশ। দুই সপ্তাহ আগে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা ৯০ পয়সা বা ৭১ শতাংশ।

কোম্পানিটির শেয়ারের এই মূল্য বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে ডিএসই থেকে সতর্ক বার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। অবশ্য ডিএসই সতর্ক বার্তা প্রকাশ করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে।

গত ২৩ ও ২৮ মার্চ দুই দফায় ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা হয়। সতর্ক বার্তায় বলা হয়, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিত্রে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠানো হয়। জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তার পেছনে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। ডিএসই থেকে এই সতর্ক বার্তা প্রকাশ করার পর ওইদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ে।

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের এক শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২০ সালে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

এদিকে চলমান হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭৯ পয়সা।

১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮০টি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৯৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।

ডিএসই’র একাধিক সদস্য বলেন, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১৩ কোটি টাকা। খুব সহজেই বিশেষ চক্রের পক্ষে এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা সম্ভব। এই কোম্পানিটির ক্ষেত্রেও তেমনটি হচ্ছে কি না তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।

তারা আরও বলেন, সার্বিক শেয়ারবাজারে এখন এক ধরনের মন্দাভাব বিরাজ করছে। অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। সেখানে লোকসানি একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম হু হু করে বাড়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই।

এদিকে, গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইনটেক লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সমতা লেদার।

এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউনিক হোটেলের ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ দাম বেড়েছে। মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, জেমিনি সি ফুডের ১২ দশমিক ১০ শতাংশ, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিডের ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, বিডি অটোকারের ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং অ্যাপেক্স ট্যানারির ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দাম বেড়েছে।

এমএএস/কেএসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।